আলোকের এই ঝর্নাধারায় ধুইয়ে দাও -আপনাকে এই লুকিয়ে-রাখা ধুলার ঢাকা ধুইয়ে দাও-যে জন আমার মাঝে জড়িয়ে আছে ঘুমের জালে..আজ এই সকালে ধীরে ধীরে তার কপালে..এই অরুণ আলোর সোনার-কাঠি ছুঁইয়ে দাও..আমার পরান-বীণায় ঘুমিয়ে আছে অমৃতগান-তার নাইকো বাণী নাইকো ছন্দ নাইকো তান..তারে আনন্দের এই জাগরণী ছুঁইয়ে দাও 'আমেরিকার দিবস-রজনী'' ~ alokrekha আলোক রেখা
1) অতি দ্রুত বুঝতে চেষ্টা করো না, কারণ তাতে অনেক ভুল থেকে যায় -এডওয়ার্ড হল । 2) অবসর জীবন এবং অলসতাময় জীবন দুটো পৃথক জিনিস – বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন । 3) অভাব অভিযোগ এমন একটি সমস্যা যা অন্যের কাছে না বলাই ভালো – পিথাগোরাস । 4) আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও , আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দেব- নেপোলিয়ন বোনাপার্ট । 5) আমরা জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহন করি না বলে আমাদের শিক্ষা পরিপূর্ণ হয় না – শিলার । 6) উপার্জনের চেয়ে বিতরণের মাঝেই বেশী সুখ নিহিত – ষ্টিনা। 7) একজন ঘুমন্ত ব্যাক্তি আরেকজন ঘুমন্ত ব্যাক্তি কে জাগ্রত করতে পারে না- শেখ সাদী । 8) একজন দরিদ্র লোক যত বেশী নিশ্চিত , একজন রাজা তত বেশী উদ্বিগ্ন – জন মেরিটন। 9) একজন মহান ব্যাক্তির মতত্ব বোঝা যায় ছোট ব্যাক্তিদের সাথে তার ব্যবহার দেখে – কার্লাইন । 10) একজন মহিলা সুন্দর হওয়ার চেয়ে চরিত্রবান হওয়া বেশী প্রয়োজন – লং ফেলো। 11) কাজকে ভালবাসলে কাজের মধ্যে আনন্দ পাওয়া যায় – আলফ্রেড মার্শা
  • Pages

    লেখনীর সূত্রপাত শুরু এখান থেকে

    'আমেরিকার দিবস-রজনী''

    আমেরিকার দিবস-রজনী' 

     নীপা  লায়লা 


    আমেরিকার দিবস-রজনী'

    সুপ্রভাত আমেরিকা!

    এমন নয় যে ঘুমের জন্য আমি খুব কাতর,তবে চব্বিশঘণ্টায় দেড় দুই ঘণ্টা ঘুম আমার খুবই জরুরী কিন্তু এখানে আসা অবদি সেই দেড় দুই ঘণ্টা ঘুম আমার একদম উধাও। সারাদিন সারারাত ঘুম ঘুম নেশা নেশা একটা ভাব চোখে লেগেই আছে কিন্তু বিছানায় গেলেই সেই ঘুম ভোজবাজির মতন উড়ে যাচ্ছে।এ অনেকটা 'পেটে নিদারুণ ক্ষুধা কিন্তু জ্বরে বেঘোর হয়ে মুখের তিতকুটে ভাবের জন্যে না খেতে পারা' মতন নিদারুণ অভিজ্ঞতা অসহ্যরকম একটা অবস্থা আর এই ঢুলুঢুলু নেশারু নেশারু ভাবের জন্য আজ প্রায় চারদিন হয়ে গেলো তবুও আমেরিকা আমায় মুগ্ধ করে উঠতে পারেনি।যেখানেই যাই আর যাকিছুই খাই কিছুই নতুন লাগছে না।যেন এই দেশ আর এইসব খাবারদাবার খেয়ে খেয়ে আমি অতি অভ্যস্ত!
    মেয়ে-জামাই পরশু সারাদিন অফিস করেছে আর গতকাল ওদের ছুটি থাকায় আমাদের এখানকার বৈশাখী মেলায় নিয়ে গিয়েছিলো।যাঁরা টিভিতে 'ডালাস' সিরিজটি দেখেছেন তাঁরা জানেন 'সাউথফোর্ক রেঞ্চ'এর নাম,সেই সাউথফোর্ক রেঞ্চেই এখানকার বৈশাখী মেলা হয়।এটি এখানকার বাংলাদেশী কমিউনিটির সবচেয়ে বড় গেট টুগেদার।সারাদিনব্যপী এই মেলায় টেক্সাসের মোটামুটি সব শহর থেকেই বাঙালিরা এখানে আসে। বিভিন্ন ধরনের স্টলের মেলা বসে এখানে আর মধ্যরাত পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে আসা বিখ্যাত শিল্পীদের কনসার্ট চলে।যেমন আমাদের দেশে 'মিনাবাজার' হয় ঠিক তেমন এই মেলা।মেলায় প্রবেশ টিকেট ১০ডলার।আগে থেকে প্ল্যান মাফিক সেখানে গিয়ে আমাদের আরেক মেয়ে-জামাই এর সাথে দেখা হয়েছে।কিন্তু সারপ্রাইজ ছিল আমার বড় বোনের সাথে দেখা হওয়াটা।সারপ্রাইজ কারণ আগের রাতেই বলে দিয়েছিলো ওর কাজ আছে তাই যেতে পারবেনা কিন্তু প্রাণের মেলায় দেশ থেকে আসা বোনকে দেখার লোভে পড়ে শেষপর্যন্ত না গিয়ে থাকতে পারেনি।এমনিতে বোন আমার ঘরকুনো, কাজ না থাকলে সহজে ঘর থেকে বেরুতেই চায়না।কাজ না থাকলে সারাদিন একদম আমার মতন আলসেমি করে শুয়ে শুয়েই কাটায় কিন্তু গতকাল কাজ শেষ করে তারপর সন্ধ্যা ৭টার পরে এখানে এসেছিলো আর আমরা মেয়ের ডাক্তার দেখিয়ে 'কেএফসি'তে লাঞ্চ করে ঘরে ফিরে এসে আলসেমি চেপে ধরায় মেলায় যেতে যেতে প্রায় রাত ৯টা বাজিয়ে ফেলেছিলাম।
    বৈশাখী মেলায় গিয়ে ঘুরেঘুরে অনেক ভার্চুয়ালি খুব পরিচিত মানুষের সাথে দেখা হয়ে গেছে।যাঁদের আচরণে কাউকেও একবারও মনে হয়নি এটিই আমার প্রথম দেখা।কতো অজানারে জানিলাম আর কতো অচেনারে চিনিলাম।আশ্চর্য এই মানব মন আর বন্ধন ! আরেকটি বিশাল সারপ্রাইজ ছিল দশ বছর বয়সে শেষ দেখা এক খালাতো ভাই এর দেখা পেলাম এখানে।
    সকালে টমেটো দিয়ে ডিমভাজি পরোটা/রুটি আর হালুয়া খেয়ে বেরিয়েছিলাম মেয়ের ডাক্তারের সাথে দেখা করতে।উইকলি চেকআপের ডেট ছিল মেয়ের।ওর ডাক্তার বাঙালি এক লেডি যিনি এখানেই জন্মে এখানেই বড় হয়েছেন কিন্তু মনেপ্রাণে একদম খাঁটি বাঙালি। যিনি শখ করেও কখনো পশ্চিমা বা অন্যকোন কাপড় পরেননা।আশ্চর্য হলেও সত্যি তিনি সবসময় শাড়ি আর ফুলস্লিভ ব্লাউজ পরেন।ওনার স্বামী নারায়ণগঞ্জ এর ছেলে। চল্লিশ বছর আগে এখানে এসেছেন।খুব অমায়িক মানুষ ভদ্রলোক। এক্স আর্মি ইঞ্জিনিয়ার উনি।প্রচুর গল্প করলেন আমাদের সাথে।ওনাদের দুই ছেলে ওরাও ডাক্তার। ওনাদের বড় ছেলের ঘরে দুই নাতনী আছে।ডাক্তারকে দেখে বোঝাই যায়না যে তিনি একজন দাদী , মনে হয় বড়জোর মধ্য ত্রিশের এক সহজসরল সুন্দরী বাঙালি রমণী যিনি ভাষায় এবং ব্যবহারে খুব যত্ন করেই নিজের বাঙালিয়ানা আগলে রেখেছেন।ডাক্তারের স্বামী স্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। উনি ইঞ্জিনিয়ার মানুষ কিন্তু এখন অন্যসব কাজ ছেড়ে নির্দ্বিধায় নিজের অতি ব্যস্ত স্ত্রীর ক্লিনিকের এডমিনিস্ট্রেশন সামলান যা আত্ম অহমিকায় আক্রান্ত আমাদের অতিচেনা একজন বাঙালি স্বামীর অহেতুক পৌরুষেয় চরিত্রের সাথে সত্যি সত্যিই বেমানান।দেশ এবং পরিবেশ মানুষকে কতো কিছু শেখায়,কতো বেশী পরিবর্তন করে দেয়।যতক্ষণ মেয়ে-জামাই ডাক্তারের চেম্বারে ছিল ততক্ষণ ওনার স্বামী নিজের কাজ ফেলে আমাদের সাথে গল্প করলেন।আমাদের চা-কফি-ড্রিঙ্কস অফার করলেন।আমরা পানি নিয়েছিলাম সবাই।আমরা বসে থাকতে থাকতেই এক ভারতীয় কাপল এসেছিলো তারপর এসেছিলো দুই বাচ্চাসহ এক বাঙালি কাপল।ওদের সাথেও বেশ খাকিকক্ষণ গল্প হোলো আমাদের।
    ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে আমরা সবজি বাজারে গেলাম।ভারতীয় দোকান,নাম 'প্যাটেল ব্রাদার্স'।দোকানে ঢুকেই মনে হয়েছে যেন একটুকরো ভারত। সব ভারতীয়রাই এখান থেকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী দেশীয় জিনিসপাতি বাজার করে।গরম গরম লাল আটার রুটি থেকে আরম্ভ করে ঘর মোছার ন্যাকড়াটা পর্যন্ত এখানে পাওয়া যায় আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস তো আছেই।ঘুরে ঘুরে নানান শাক-সবজি(কঁচুর মুখী আর মিষ্টি আলুও কিনেছি), বিস্কিট, চানাচুর,আটার রুটি,কাঁচা আম,কলা,কেক আর আরও কিছু জিনিসপাতি কিনে আমরা গেলাম, 'ওয়ান ডলার'স্টোরে।এটি অনেকটা আমাদের 'নিলামবালা ছয় আনা' টাইপ দোকান।দুই নয়নে যা দেখা যায় সব এখানে এক ডলার দাম।খুব সুন্দর সুন্দর জিনিসপাতি যেমন আছে তেমনি আলতু ফালতু জিনিসও আছে তবে কারুর না কারুর সব প্রয়োজনীয় জিনিসপাতিতেই ঠাসা এই স্টোর এখানে বিভিন্ন দেশীয়দের ভিড়ও বেশ।সামান্য টুকটাক জিনিস নিয়ে আমরা এখান থেকে বেরিয়ে কেএফসি'তে লাঞ্চ করতে গেলাম।এখানকার কেএফসি চিকেন আমাদের দেশের নিম্নমানের বিশ্রী গন্ধযুক্ত কেএফসির মতন না। বুঝলাম আমার দেশে যেতে যেতে সব কেমন করে নিজের বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ভেজালে পরিপূর্ণ হয়ে যায়।চিকেন খেয়ে যেমনি খুশী হয়েছি তেমনি নিজের দেশের কেএফসির কথা মনে করে মনখারাপ করেছি,খুবই!
    এইসব ত্যানফ্যান ঘোরাঘুরি করতে করতে মেয়ের অফিস,জামাই এর হসপিটাল দেখলাম আর মোবাইল সিম নেয়ার জন্যে দোকানে গেলাম।সিমের দোকানে গিয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টালাম।নিজে সিমকার্ড না নিয়ে মেয়েকে বললাম,পাপাকে দাও সিম কারণ আমার সারাক্ষণ অনলাইন থাকার দরকার নেই,প্রয়োজন হলে পাপার ফোন হটস্পট করে নেবো আর ঘরে তো ওয়াইফাই আছেই তোমাদের,এতেই আমার হবে।মেয়ে একটু অবাক হয়েছে কিন্তু এখনকার বাচ্চারা ভীষণ স্মার্ট, নিজেদের অনুভূতি চেপে রাখতে এদের জুরি নেই আর এখন তো মেয়ে আমেরিকান হয়ে গেছে,দারুণ প্র্যাকটিক্যাল! তাই মুচকি হেসে নিজের পাপাকে বললো,পাপা সিম আপনি পাবেন কিন্তু অবশ্যই আমার মার সাথে শেয়ার করবেন।পাপা তো মহাখুশী কারণ কথা ছিল একটা সিম আমরা নেবো এবং সেটি আমার ফোনে ইন্সার্ট করা হবে।বাপ জানলোই না যে এখানে মেয়ের বদান্যতার চেয়েও মায়ের অবদান এবং স্যাক্রিফাইসটা যে কি! যাক বাবা,স্বামী খুশী তো আমিও খুশী! উনি মানুষ ভালো তাই ভালো মানুষকে একটু অলক্ষ্যে থেকেই নাহয় খুশী করা গেলো সেইসাথে সারাক্ষণ অনলাইন না থাকার কথা বলা আমার ডাক্তারের পরামর্শও শোনা হোলো।
    ঘরে ফিরে সবাই পাওয়ার ন্যাপ নিতে গিয়ে আমাদের মেলায় যেতে যেতে রাত প্রায় ৯টা বেজে গেলো। মেলা শেষে আমরা মাস্টার সাহেবের ছেলেবেলার বন্ধু টিপু ভাই যে কিনা এখন দীর্ঘদিন থেকে আমাদের জামাইয়ের বন্ধু ওনাদের নতুন কেনা বাড়িতে গেলাম।সেখানে মহা হুলুস্থুল কাজকারবার। প্রচুর বাঙালি বন্ধুবান্ধব সবাই বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে এসেছে।রাত গভীর কিন্তু টিপু ভাই বা ওনার স্ত্রীর মুখে হাসির অভাব নেই।আড্ডায় আড্ডায় আমাদের খেতে খেতে রাত প্রায় ২টা বেজে গেলো। এতো মানুষের খাওয়া হঠাৎ করেই কিভাবে যেন ম্যানেজ হয়ে গেলো।ঘরে রান্না ছিল আবার মেলা থেকে ফেরার পথে টিপু ভাই বিরানি নিয়ে এসেছিলেন তাই সবাই মিলেমিশে খেয়ে রাত প্রায় ৩টায় আমরা ঘরে ফিরে এসেছি।ঘরে ফিরে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে শুতে শুতে প্রায় ভোর।ব্ল্যাঙ্কেট মুড়ি দিয়ে আরামছে এখন সবাই ঘুমাচ্ছে।আমার আর ঘুম হোলো না।আমার কেমন ঘুম ঘুম নেশারু নেশারু অবস্থা।এখনো ঠিকমতন সকাল হয়নি।ঘড়িতে বাজে সকাল :৪০! আজও সারাদিন নানান প্রোগ্রাম আছে আমাদের।মেয়ে-জামাই এর ছুটি আজ তাই ঘুমাবে ওরা ইচ্ছামতন। আমি এখন নিচে যাবো। নাস্তার জন্য গতকাল কেনা সবজি দিয়ে এখন মিক্স ভেজিটেবল রান্না করবো।
    পাঁচ দিন ভাত খাইনা।আজও খাওয়া হবে কিনা কে জানে, কারণ দিনে রাতে দুই বেলাতেই দাওয়াত আছে।এতো দীর্ঘদিন ভাত না খেয়ে আমার মতন ভেতো বাঙালি ক্যামনে বাঁচে!!
    তবুও,
    আমি ভালো আছি!
    তোমরা ভালো থেকো!
    ভালো থেকো প্রিয় বাংলাদেশ!
    খুব মিস করি সবাইকে!
    তোমাদের জন্য ভালোবাসা।
    শুভরাত্রি প্রিয় বাংলাদেশ।
    প্ল্যানো, টেক্সাস!
    ১৬ই এপ্রিল '১৭





















    http://www.alokrekha.com

    1 comments:

    1. প্রবাসে জীবন আমেরিকা নীপা লায়লা সানজিদা রুমি নীপা লায়লা আমেরিকার দিবস-রজনী' ভালো লাগলো লেখা। লেখক তার লেখায় এই প্রবাস জীবনের চালচিত্র- বলেই পাঠকের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে । এই ধরণের আরো লেখা আশা করি। লেখক কে অনেক ভালোবাসা। পরবর্তী লেখার প্রতীক্ষায় থাকলাম।

      ReplyDelete

    অনেক অনেক ধন্যবাদ