আলোকের এই ঝর্নাধারায় ধুইয়ে দাও -আপনাকে এই লুকিয়ে-রাখা ধুলার ঢাকা ধুইয়ে দাও-যে জন আমার মাঝে জড়িয়ে আছে ঘুমের জালে..আজ এই সকালে ধীরে ধীরে তার কপালে..এই অরুণ আলোর সোনার-কাঠি ছুঁইয়ে দাও..আমার পরান-বীণায় ঘুমিয়ে আছে অমৃতগান-তার নাইকো বাণী নাইকো ছন্দ নাইকো তান..তারে আনন্দের এই জাগরণী ছুঁইয়ে দাও মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস গাঁথা (৪) ~ alokrekha আলোক রেখা
1) অতি দ্রুত বুঝতে চেষ্টা করো না, কারণ তাতে অনেক ভুল থেকে যায় -এডওয়ার্ড হল । 2) অবসর জীবন এবং অলসতাময় জীবন দুটো পৃথক জিনিস – বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন । 3) অভাব অভিযোগ এমন একটি সমস্যা যা অন্যের কাছে না বলাই ভালো – পিথাগোরাস । 4) আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও , আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দেব- নেপোলিয়ন বোনাপার্ট । 5) আমরা জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহন করি না বলে আমাদের শিক্ষা পরিপূর্ণ হয় না – শিলার । 6) উপার্জনের চেয়ে বিতরণের মাঝেই বেশী সুখ নিহিত – ষ্টিনা। 7) একজন ঘুমন্ত ব্যাক্তি আরেকজন ঘুমন্ত ব্যাক্তি কে জাগ্রত করতে পারে না- শেখ সাদী । 8) একজন দরিদ্র লোক যত বেশী নিশ্চিত , একজন রাজা তত বেশী উদ্বিগ্ন – জন মেরিটন। 9) একজন মহান ব্যাক্তির মতত্ব বোঝা যায় ছোট ব্যাক্তিদের সাথে তার ব্যবহার দেখে – কার্লাইন । 10) একজন মহিলা সুন্দর হওয়ার চেয়ে চরিত্রবান হওয়া বেশী প্রয়োজন – লং ফেলো। 11) কাজকে ভালবাসলে কাজের মধ্যে আনন্দ পাওয়া যায় – আলফ্রেড মার্শা
  • Pages

    লেখনীর সূত্রপাত শুরু এখান থেকে

    মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস গাঁথা (৪)



    ১৯৫২'র সালের ভাষা আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জাতীয়তাবাদে উত্থান।৬ দফা আন্দোলন ও ৬৯র গণ অভ্যুত্থানকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম সোপান বিবেচনা করা হয়। তাই স্বাধীনতার ইতিহাস জানার জন্য এর আগের প্রেক্ষাপট জানা আবশ্যক।

    ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ মৃত্যুবরণ করেন। এরপর পূর্ববাংলার প্রধান মন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন। লিয়াকত আলী খান প্রধানমন্ত্রীর আসনে আসীন হন।
     মোহাজির  ( migrated অভিপ্রয়াণলিয়াকত আলী খান পাঞ্জাবী আমলাচক্রের ষড়যন্ত্রের শিকার হন।
    ১৯৫১ সালে আইয়ুব খান এই পাঞ্জাবী আমলাতন্ত্র চক্রের সহায়তায় অনেক সিনিয়র যোগ্য ও সুদক্ষ কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে পাকিস্তানের প্রধান সেনাপতির পদে অভিষিক্ত হন।
    তার কিছুদিন পর ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর লিয়াকত আলী খান রাওয়াল-পিন্ডিতে এক জনসভায়  আততায়ীর গুলীতে নিহত হন । লিয়াকত আলীর স্থলাভিষিক্তি হন খাজা নাজিমউদ্দীন। গভর্নর জেনারেল হন গোলাম মোহাম্মদ।১৯৫৩ সালের ১৭ই এপ্রিল  গোলাম মোহাম্মদ খাজা নাজিমউদ্দীনকে পদচ্যুত করে তদানীন্তন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত বগুড়ার মোহাম্মদ আলীকে প্রধানমন্ত্রী করেন।




    ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা দান করে এবংরাজনৈতিক গুরুত্ব বহুমাত্রায় বাড়িয়ে দেয়।১৯৫৪ তে পূর্ববাংলা প্রাদেশিক পরিষদ, মাওলানা ভাসানী- আতাহার আলীর নেতৃত্বে কৃষক শ্রমিক ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনের আগে পার্টি আওয়ামী মুসলিম লীগ ও নেজাম-এ-ইসলাম পার্টির সমন্বয়ে ‘যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হয়।                                                         


    বাংলাদেশের ইতিহাসে হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী অবদান
    উল্লেখযোগ্য।তিনি একজন বিখ্যাত বাঙ্গালী রাজনীতিবিদ ,
    আইনজীবী ছিলেন   যুক্তফ্রন্ট  গঠনের মূল নেতাদের 
    মধ্যে অন্যতম।গণতান্ত্রিক রীতি ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন বলে তিঁনি 'গণতন্ত্রের মানসপুত্র' বলে আখ্যায়িত হন।বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার জন্ম। তিনি ছিলেন বিচারপতি স্যার জাহিদ সোহরাওয়ার্দির কনিষ্ঠ সন্তান। জাহিদ সোহরাওয়ার্দি কলকাতা হাইকোর্টের একজন খ্যাতনামা বিচারক ছিলেন। তার পরিবারের সদস্যবর্গ তৎকালীন ভারতবর্ষের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের প্রথা অনুসারে উর্দু ভাষা ব্যবহার করতেন। কিন্তু সোহরাওয়ার্দি নিজ উদ্যোগে বাংলা ভাষা শেখেন এবং বাংলার চর্চা করেন। কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষাজীবন শুরু করার পর যোগ দেন সেইন্ট জ্যাভিয়ার্স কলেজে। সেখান থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে তিনি স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বিজ্ঞান বিষয়ে সম্মানসহ স্নাতক অর্জন করেন। এছাড়া এখানে তিনি আইন বিষয়েও পড়াশোনা করেন এবং বিসিএল ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯১৮ সালে গ্রে'স ইন হতে বার এট ল ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর ১৯২১ সালে কলকাতায় ফিরে এসে আইন পেশায় নিয়োজিত হন।প্রথমে তিনি যোগ দেন চিত্তরঞ্জন দাসের স্বরাজ পার্টিতে।এটি তখন মূলত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের অভ্যন্তরে একটি দল ছিল। ১৯২৩ এর "বেঙ্গল প্যাক্ট" স্বাক্ষরে তার যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। ১৯২৪ সালে তিনি কলকাতা পৌরসভার ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হন। ১৯২৭ সালে সোহরাওয়ার্দী পদত্যাগ করেন। ১৯২৮ সালে সর্বভারতীয় খিলাফত সম্মেলন এবং সর্বভারতীয় মুসলিম সম্মেলন অনুষ্ঠানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মুসলমানদের মধ্যে তার ব্যাপক রাজনৈতিক প্রভাব থাকলেও ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত মুসলিম লীগের সাথে তিনি জড়িত হননি। ১৯৩৬ সালের শুরুর দিকে তিনি ইন্ডিপেন্ড্যান্ট মুসলিম পার্টি নামক দল গঠন করেন। ১৯৩৬ এর শেষের দিকে এই দলটি বাংলা প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাথে একীভূত হয়। এই সুবাদে তিনি বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল মুসলিম লীগ তথা বিপিএমএল এর সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। ১৯৪৩ সালের শেষ দিক পর্যন্ত এই পদে ছিলেন। ১৯৪৩ সালে শ্যমা-হক মন্ত্রীসভার পদত্যাগের পরে গঠিত খাজা নাজিমুদ্দিনের মন্ত্রীসভায় তিনি একজন প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন। খাজা নাজিমুদ্দিনের মন্ত্রীসভায় তিনি শ্রমমন্ত্রী, পৌর সরবরাহ মন্ত্রী ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৬ এর নির্বাচনে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের বিপুল বিজয়ে তিনি এবং আবুল হাশিম মূল কৃতিত্বের দাবীদার ছিলেন। ১৯৪৬ সালে বাংলার মূখ্যমন্ত্রী হিসেবে পাকিস্তান আন্দোলনে তিনি ব্যাপক সমর্থন প্রদান করেন।পূর্ব বাংলার মূখ্যমন্ত্রী হিসেবে ১৯৪৬ সালে তিনি পাকিস্তান আন্দোলনের প্রতি তার সমর্থন এবং সহযোগিতা প্রদান করেন। স্বাধীন ভারতবর্ষের ব্যাপারে কেবিনেট মিশন প্ল্যানের বিরুদ্ধে জিন্নাহ ১৯৪৬ সালের আগস্ট ১৬ তারিখে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের ডাক দেন। বাংলায় সোহরাওয়ার্দির প্ররোচনায় এই দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়।




    মুসলমানদের জন্য আলাদা বাসভূমি পাকিস্তানের দাবীতে এই দিন মুসলমানরা বিক্ষোভ করলে কলকাতায় ব্যাপক হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বেঁধে যায়। পূর্ব বাংলার নোয়াখালিতে এইদিন বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ চলে। সোওহরাওয়ার্দী এসময় তার নীরব ভূমিকার জন্য হিন্দুদের নিকট ব্যাপক সমালোচিত হন। তার উদ্যোগে ১৯৪৬ সালে দিল্লী সম্মেলনে মুসলিম লীগের আইন প্রণেতাদের নিকট লাহোর প্রস্তাবের একটি বিতর্কিত সংশোধনী পেশ করা হয়। এই সংশোধনীতে অখন্ড স্বাধীন বাংলার প্রস্তাবনা ছিল। কিন্তু কলকাতায় হিন্দু মুসলমান রায়টে তার বিতর্কিত ভূমিকার কারণে হিন্দুদের নিকট তার গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়। ফলে শরৎচন্দ্র বসু ছাড়া কংগ্রেসের আর কোন নেতা তার অখণ্ড বাংলার ধারণার সাথে একমত ছিলেন না। ১৯৪৭ সালে তিনি বাংলার মূখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যান। তবে পদত্যাগের পর তিনি সাথে সাথে পাকিস্তান না গিয়ে কলকাতায় থেকে যান। এসময় কলকাতার মুসলমানদের সাথে হিন্দুদের পুণরায় বিরোধের সম্ভাবনায় তিনি মহাত্মা গান্ধীর সাহায্য চান। মহাত্মা গান্ধী এসময় তিনি যৌথ ভূমিকার শর্তে সোহরাওয়ার্দীর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা প্রশমনের ডাকে সাড়া দেন। উল্লেখ্য যে সোহরাওয়ার্দি ৪৭ এর দেশভাগের সাথে সাথে পাকিস্তানে চলে যাননি। ১৯৪৯ সালে তৎকালীন ভারত সরকার তার উপর ক্রমবর্ধমান করের বোঝা চাপালে তিনি ভারত ত্যাগ করে পাকিস্তান চলে যেতে বাধ্য হন।১৯৪৭ এর আগস্টে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পরে মুসলিম লীগের রক্ষনশীল নেতারা খাজা নাজিমুদ্দিনের নেতৃত্বে শক্তিশালী হয়ে উঠেন। এর আগে ১৯৪৭সালের আগস্ট ৫ এ খাজা নাজিমুদ্দিন জিন্নাহর পরোক্ষ সমর্থনে মুসলিম লীগের সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হন।খাজা নাজিমুদ্দিন পূর্ববাংলার মূখ্যমন্ত্রী হবার পর বেশ কয়েকবার সোহরাওয়ার্দীকে "ভারতীয় এজেন্ট" এবং"পাকিস্তানের শত্রূ"হিসেবে অভিহিত করেন।




     সোহরাওয়ার্দীকে পাকিস্তানের আইনসভার সদস্য পদ থেকে অপসারিত করা হয়। তার অনুসারী রা অনেকে ১৯৪৮ এর শুরুর দিকে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগ এবং ১৯৪৯ এর জুনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামি মুসলিম লীগ গঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশেমের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ'প্রতিষ্ঠিত হয়।তবে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠনটির নাম থেকে পরে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠালগ্নে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি হন আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সহ-সভাপতি হন আতাউর রহমান খান, শাখাওয়াত হোসেন ও আলী আহমদ। টাঙ্গাইলের শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং শেখ মুজিবুর রহমান, খন্দকার মোশতাক আহমদ ও এ কে রফিকুল হোসেনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কোষাধ্যক্ষ হন ইয়ার মোহাম্মদ খান। কারাগারে অন্তরীণ থাকা অবস্থাতেই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান মুজিব। অন্যদিকে, পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংগঠনটির নাম রাখা হয় নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। এর সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। এই তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী।স্বাধীনতার  ইতিহাস জানতে হলে মূল ও মুখ্য নেতাদের  জানা খুব প্রয়োজন ।




    মুসলিম লীগ এই নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। ৩০৯ আসনের পরিষদে  যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি ও মুসলিম লীগ মাত্র দশটি আসন পায়। ১৯৫৪ সালের ৩ এপ্রিল শেরে-বাংলার নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় শপথ নেয়।শপথ অনুষ্ঠানের দিনেই আওয়ামী  লীগ সমর্থকরা ফজলুল হকের বিরুদ্ধে গভর্নর হাইসের গেটে স্লোগান দেয়। যুক্তফ্রন্টেরঅঙ্গ  দলগুলোর মধ্যে শুরু থেকেই সমঝোতার পরিবর্তে বিভেদ দানা বেঁধে  ওঠে। এই সুযোগে ১৯৫৪ সালের ৩০ মে গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে ৯২-ক ধারার অধীনে গভর্নরের শাসন যুক্তফ্রন্ট জারি করেন।    

                                                  একই দিনে মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মীর্জা পূর্ববাংলার গভর্নররূপে প্রবীন মুসলিম লীগ নেতা চৌধুরী খালিকুজ্জামানের স্থলাভিষিক্ত হন। ১৯৫৪ সালের ৪ অক্টোবর প্রধান সেনাপতি জেনারেল আইয়ুব খান প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল বগুড়া ও স্যার জাফরউল্লাহ খানের সাথে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান। পথে তিনি লন্ডনের এক হোটেলে বসে পাকিস্তানের ভবিষ্যত রাজনীতির একটি ছক তৈরি করেন, তাতে পশ্চিম-পাকিস্তানের প্রদেশগুলো ভেঙে দিয়ে এক ইউনিট করে পূর্ব-পাকিস্তানকেও আরেকটি ইউনিট ধরে সংখ্যাসাম্য নীতির পরিকল্পনা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষ করে তারা দেশে ফেরার পরই ২৪ অক্টোবর গণপরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়। মোহাম্মদ আল বগুড়া নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করে। জেনারেল আইয়ুব খান ও ইস্কান্দার মীর্জা এই মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দফতের নিযুক্ত হন।                        



    ইতিমধ্যে পূর্ববাংলায় যুক্তফ্রন্টের শরিক দল আওয়ামী লীগ  কৃষক শ্রমিক পার্টির দলাদলি প্রকাশ্য হয়ে পড়ে। ১৯৫৪ সালের ১৪ নভেম্বর গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদঢাকা সফরে এলে বিমানবন্দরে তাকে মাল্যদানের জন্য আওয়ামী লীগ  কৃষক শ্রমিকপার্টির মধ্যে প্রকাশ্য প্রতিযোগিতা হয়। ১১ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী দেশে ফিরে এসে ২০ডিসেম্বর মোহাম্মদ আলী বগুড়ার মন্ত্রিসভায় আইনমন্ত্রীরূপে যোগদান করেন।সোহরাওয়ার্দী এ সময় গণপরিষদের পরিবর্তে ‘কনভেনশন-এর মাধ্যমে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের প্রস্তাব দিলে রাজনৈতিক মহলে তুমুল বাক- বিতণ্ডা সৃষ্টি হয়।  
     ১৯৫৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি যুক্তফ্রন্ট সংসদীয় দলের সবায় আওয়ামী লীগ ফজলুল হকের সংসদীয় নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা প্রস্তাব আনে। ফলে তীব্র বাদানুবাদহৈচৈ এবং দুই দলের আলাদা আলাদা বিজয়ের ঘোষণার মধ্য দিয়ে সভাটি পণ্ড হয়ে যায়। যুক্তফ্রন্টের পার্লামেন্টারি পার্টির এটিই ছিল শেষ যৌথ সভা। এরপর কার্যত যুক্তফ্রন্টের বিলুপ্তিঘটে। ১৯৫৫ সালের ৩ জুন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী বগুড়া ঢাকা এসে সোহরাওয়ার্দী ও হক সাহেবের সাথে আলাপ-আলোচনার পর ৯২-ক ধারা শীঘ্রই প্রত্যাহার এবং ফজলুল হক সাহেবকে মন্ত্রিসভা গঠনের আমন্ত্রণ জানানোর ঘোষণা করেন। ১৯৫৫ সালের জুন মাসে পাকিস্তানের নতুন পণপরিষদ গঠন করা হলো। ইস্কান্দার মীর্জা গভর্নর জেনারেল এবং চৌধুরী মোহাম্মদ আলী প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হন। পূর্ববাংলায় আবূ হোসেন সরকারের নেতৃত্বে কৃষক শ্রমিক পার্টির মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। ১৯৫৫ সালের ২১,২২ ও ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী মুসলিম লীগের নাম থেকে ‘মুসলিম শব্দ বর্জন করে দলের ‘অসাম্প্রদায়িক চরিত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে,১৯৫৬ সালের ৯ জানুয়ারি নতুন গণ পরিষদ শাসনতন্ত্র রচনার কাজ শুরু করে। ২ মার্চ গভর্নর জেনারেল নতুন শাসনতন্ত্রে স্বাক্ষর করেন এবং ২৩ মার্চ থেকে তা বলবৎ হয়। শাসনতন্ত্রে ‘পূর্ববাংলা নাম পরিবর্তন করে ‘পূর্ব-পাকিস্তান রাখা হয়। পশ্চিমাঞ্চলের সকল প্রদেশ একীভূত করে এক ইউনিটের ভিত্তিতে ‘পশ্চিম-পাকিস্তান নাম রাখা হয়। দুই প্রদেশের মধ্যে সংখ্যাসাম্য নীতি প্রবর্তন করা হয়। বাংলা ও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষারূপে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং যুক্ত নির্বাচন পদ্ধতি চালু করা হয়। ১৯৫৬ সালের ৯ মার্চ শেরে বাংলা ফজলুল হক পূর্ব-পাকিস্তানের গভর্নর নিযুক্ত হন। ১৯৬৫ সালের আগস্ট মাসে পূর্ব-পাকিস্তানে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে খাদ্যের দাবিতে অনুষ্ঠিত ভুখা মিছিলে গুলী চলে। ফলে গভর্নর ফজলুল হক ও তাঁর দলের আবু হোসেন সরকারের নেতৃত্বাধীন প্রাদেশিক মিন্ত্রসভা সংকটে পড়ে। ৩০ আগস্ট আবু হোসেন সরকারের মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। গভর্নর ফজলুল হক ১৯৫৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আতাউর রহমান খানকে পূর্ব-পাকিস্তানের মন্ত্রিসভা গঠনের আহবান জানান। কেন্দ্রেও রিপাবলিকান পার্টির সমর্থন ও ইস্কান্দার মীর্জার গোপন হস্তক্ষেপে আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভা গঠন করে। কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।সোহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রীত্বের আমলে আওয়ামী লীগের মধ্যকার ডান ও বাম পন্থী  দুই দলের  বিরোধ স্পষ্ট আকার লাভ করে। পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৫৭ সালের ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি কাগমারীতে দলের কাউন্সিল অধিবেশন আহ্বান করেন। সোহরাওয়ার্দী এ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা আসেন। ভাসানীর নেতৃত্বাধীন বামপন্থী দল পশ্চাত্য ও সাম্রাজ্যবাদ ঘেঁষা সোহরাওয়ার্দীর  পররাষ্ট্রনীতির কঠোর সমালোচনা করেন। ফলে আওয়ামী লীগে সোহরাওয়ার্দী ও ভাসানীর নেতৃত্বাধীন দুই দলের  অন্তবিরোধ তীব্র  আকার ধারণ করে। কাগমারী সম্মেলনেই মাওলানা ভাসানী তাঁর বক্তৃতায় পশ্চিম-পাকিস্তানের প্রতি তাঁর ইতিহাসখ্যাত ‘আসসালামু আলাইকুম উচ্চারণ করেন। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বিংশ শতকের ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম তৃণমূল রাজনীতিবিদ ও গণআন্দোলনের নায়ক ছিলেন। যিনি জীবদ্দশায় ১৯৪৭-এ সৃষ্ট পাকিস্তান ও ১৯৭১-এ প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।তিনি বাংলাদেশের জনগণের কাছে “মজলুম জননেতা হিসাবে সমধিক পরিচিত।১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া পল্লীতে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা হাজী শারাফত আলী। ভাই বোনদের মধ্যে মোঃ আব্দুল হামিদ খান সবার ছোট। তাঁর ডাক নাম ছিল চেগা মিয়া। অল্প বয়সে তাঁর পিতা শারাফত আলী মারা যান। পিতৃহীন হামিদ প্রথমে কিছুদিন চাচা ইব্রাহিমের আশ্রয়ে থাকেন। ওই সময় ইরাকের এক আলেম ও ধর্ম প্রচারক নাসির উদ্দীন বোগদাদী সিরাজগঞ্জে আসেন। মোঃ আব্দুল হামিদ খান তাঁর আশ্রয়ে কিছুদিন কাটান। এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কিছুদিন পূর্বে ১৮৯৩ সালে তিনি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার জমিদার শামসুদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর বাড়িতে যান। সেখানে তিনি মাদ্রাসার মোদাররেসের কাজ করেন এবং জমিদারের ছেলে-মেয়েকে পড়ানোর দায়িত্ব নেন। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে পীর সৈয়দ নাসীরুদ্দীনের সাথে আসাম গমন করেন। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ইসালামিক শিক্ষার উদ্দেশ্যে ১৯০৭-এ দেওবন্দ যান। দুই বছর সেখানে অধ্যয়ন করে আসামে ফিরে আসেন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ময়মনসিংহ সফরে গেলে তাঁর ভাষণ শুনে ভাসানী অণুপ্রাণিত হন।১৯১৯ সালে কংগ্রেসে যোগদান করে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে দশ মাস কারাদণ্ড ভোগ করেন। ১৯২৩ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন স্বরাজ্য পার্টি গঠন করলে ভাসানী সেই দল সংগঠিত করার ব্যাপারে ভূমিকা পালন করেন।



    ১৯২৫ সালে তিনি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার জমিদার শামসুদ্দিন মহম্মদ চৌধুরীর মেয়ে আলেমা খাতুনকে বিবাহ করেন। ১৯২৬ সালে তিনি তার সহধর্মিণী আলেমা খাতুনকে নিয়ে আসাম গমন করেন এবং আসামে প্রথম কৃষক-প্রজা আন্দোলনের সুত্রপাত ঘটান। ১৯২৯-এ আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসান চরে প্রথম কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন। এখান থেকে তার নাম রাখা হয় "ভাসানীর মাওলানা"।এরপর থেকে তার নামের শেষে ভাসানী শব্দ যুক্ত হয়। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠনকারী প্রধান নেতাদের মধ্যে অন্যতম। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। তিনি  বামধারা রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তাঁর অণুসারীদের অনেকে এজন্য তাঁকে "লাল মওলানা" নামেও ডাকতেন। তিনি একজন দূরদর্শী নেতা এবং পঞ্চাশ দশকেই নিশ্চিত হয়েছিলেন যে   পাকিস্তানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ একটি অচল রাষ্ট্রকাঠামো। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দের কাগমারী সম্মেলনে তিনি পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসকদের 'ওয়ালাকুমুসসালাম" বলে।সর্বপ্রথমবলে পূর্ব  পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতার ঐতিহাসিক ঘণ্টা বাজিয়েছিলে১৯৩১ সালে সন্তোষের কাগমারীতে,সিরাজগঞ্জেরকাওরাখোলায় ১৯৩২--সালে ও ১৯৩৩-এ গাইবান্ধায় বিশাল কৃষক সম্মেলন করেন।
    ১৯৩৭-এ মাওলানা ভাসানী কংগ্রেস ত্যাগ করে মুসলিম লীগে যোগদান করেন। সেই সময়ে আসামে 'লাইন প্রথা' চালু হলে এই নিপীড়নমূলক প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করেন। এসময় তিনি "আসাম চাষী মজুর সমিতি" গঠন করেন। ১৯৪০ সালে শের-এ-বাংলা এ.কে. ফজলুল হকের সঙ্গে মুসলিম লীগের লাহোর সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯৪৪ সালে মাওলানা ভাসানী আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪৫-৪৬ সালে আসাম জুড়ে বাঙালিদের বিরুদ্ধে "বাঙ্গাল খেদাও" আন্দোলন শুরু হলে ব্যাপক দাঙ্গা দেখা দেয়। এসময় বাঙালিদের রক্ষার জন্য ভাসানী বারপেটা, গৌহাটিসহ আসামের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়ান। পাকিস্তান আন্দোলনে অংশ নিয়ে ১৯৪৭ সালে আসামে গ্রেফতার হন। ১৯৪৮-এ মুক্তি পান। এরপর তিনি টাঙ্গাইলের সন্তোষে ফিরে আসেন।


    ১৯৪৮ সালের প্রথম দিকে তিনি বঙ্গীয় মুসলিম লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতায় পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মার্চ ব্যবস্থাপক সভার কার্যাবলি বাংলায় পরিচালনা করার জন্য স্পিকারের কাছে দাবি জানান এবং এই দাবি নিয়ে পীড়াপীড়ি করেন। ১৯ মার্চ বাজেট বক্তৃতায় অংশ নিয়ে বলেন, যেসব কর কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ববঙ্গ প্রদেশ থেকে সংগ্রহ করে তার শতকরা ৭৫% প্রদেশকে দিতে হবে। এখানে উলেস্নখ যে, ব্রিটিশ আমলে বঙ্গপ্রদেশ জুটেক্স ও সেলসট্যাক্স রাজস্ব হিসেবে আদায় করত এবং এই করের ভাগ কেন্দ্রীয় সরকারকে দিতে হতো না। পাকিস্তান সৃষ্টির পর কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ববঙ্গ সরকারের হাত থেকে এই কর ছিনিয়ে নিয়ে নিজেরাই আদায় করতে থাকে যার ফলে পূর্ববঙ্গ সরকার আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো এই সময় পূর্ববঙ্গ সরকারের বার্ষিক বাজেট ছিল মাত্র ৩৬ কোটি টাকা। যাই হোক, মুসলিম লীগ দলের সদস্য হয়েও সরকারের সমালোচনা করায় মুসলিম লীগের ক্ষমতাসীন সদস্যরা মওলানা ভাসানীর ওপর অখুশী হয় এবং তার নির্বাচনে ত্রূটি ছিল এই অজুহাত দেখিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করে এবং মওলানা ভাসানীকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকে।




    এতদসত্ত্বেও পূর্ববঙ্গের তৎকালীন গভর্নর এক নির্বাহী আদেশ বলে মওলানা ভাসানীর নির্বাচন বাতিল করেন। বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের জনবিরোধী কার্যকলাপের ফলে মওলানা ভাসানী ১৯৪৯ সালের ২৩-২৪ জুন ঢাকার টিকাটুলিতে রোজ গার্ডেনে মুসলিম লীগ কর্মী সম্মেলন আহ্বান করেন। ২৩ জুন ওই কর্মিসম্মেলন অণুষ্ঠিত হয়। সারাদেশ থেকে প্রায় ৩০০ কর্মী সম্মেলনে যোগদান করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন আতাউর রহমান খান। মওলানা ভাসানী ছিলেন প্রধান অতিথি। ২৩ জুন পূর্ববঙ্গের প্রথম বিরোধী রাজনৈতিক দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ গঠিত হয়। মওলানা ভাসানী সর্বসম্মতিক্রমে এই দলের সভাপতি নির্বাচিত হলেন। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শামসুল হক। ২৪ জুন আরমানীটোলা ময়দানে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম জনসভা অণুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৯ সালের মধ্যভাগে পূর্ববঙ্গে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। ১১ অক্টোবর আরমানীটোলা ময়দানে আওয়ামী মুসলিম লীগের একটি জনসভা অণুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় খাদ্য সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতার জন্য পূর্ববঙ্গ মন্ত্রিসভার পদত্যাগ দাবী করা হয় এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মওলানা ভাসানী ভুখা মিছিলে নেতৃত্ব দেন। ভূখা মিছিলে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ১৯৪৯-এর ১৪ অক্টোবর গ্রেফতার হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারাবরণ করেন। ১৯৫০ সালে সরকার কর্তৃক রাজশাহী কারাগারের খাপরা ওয়ার্ড এর বন্দীদের উপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অনশন ধর্মঘট পালন করেন এবং ১৯৫০ সালের ১০ ডিসেম্বর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২-র ৩০ জানুয়ারি ঢাকা জেলার বার লাইব্রেরি হলে তার সভাপতিত্বে অণুষ্ঠিত এক সভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ গঠিত হয়। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সহযোগিতার কারণে গ্রেফতার হয়ে ১৬ মাস কারানির্যাতনের শিকার হন। অবশ্য জনমতের চাপে ১৯৫৩ সালের ২১ এপ্রিল মওলানা ভাসানীকে জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয়।পূর্ববঙ্গের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৯৫৩ সালের ৩ ডিসেম্বর কৃষক-শ্রমিক পার্টির সভাপতি শের-এ-বাংলা এ.কে. ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট নামক নির্বাচনী মোর্চা গঠন করেন। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল বিজয় অর্জন করে এবং পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদে ২৩৭ টির মধ্য ২২৮ টি আসন অর্জনের মাধ্যমে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ফজলুল হকের নেতৃত্বে সরকার গঠন করার পর ২৫শে মে ১৯৫৪ মাওলানা ভাসানী বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে যান এবং সেখানে বক্তব্য প্রদান করেন।৩০ মে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে গভর্ণরের শাসন জারি করে এবং মাওলানা ভাসানীর দেশে প্রত্যাবর্তনের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেন। ১১ মাস লন্ডন, বার্লিন, দিল্লী ও কলকাতায় অবস্থান করার পর তার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলে ১৯৫৫-র ২৫ এপ্রিল দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। পূর্ব বাংলায় খাদ্যজনিত দুর্ভিক্ষ রোধের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ৫০ কোটি টাকা আদায়ের দাবিতে ১৯৫৬-র ৭ মে ঢাকায় অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। সরকার দাবি মেনে নিলে ২৪ মে অনশন ভঙ্গ করেন। একই বছর ১২ সেপ্টেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ-রিপাবলিকান পার্টির কোয়ালিশন সরকার গঠিত হলে মাওলানা ভাসানী সরকারের পররাষ্ট্রনীতির বিরোধিতা করে নিরপেক্ষ নীতি অবলম্বন করার জন্য সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করেন। ১৯৫৬তে পাকিস্তান গণপরিষদে যে খসড়া শাসনতন্ত্র বিল পেশ করা হয় তাতে পাকিস্তানকে ইসলামিক রিপাবলিক বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল,তখন মাওলানা ভাসানী পল্টনের জনসভায় তার বিরোধিতা করে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছ ।



    কাগমারী সম্মেলনে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অণুষ্ঠিত হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি ডক্টর কাজী মোতাহার হোসেনের সভাপতিত্বে অণুষ্ঠানটি আরম্ভ হয়।এই সভায় মওলানা ভাসানীও বক্তৃতা করেন। বক্তৃতায় অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে তিনি বলেন, পূর্ববাংলা পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসকদের দ্বারা শোষিত হতে থাকলে পূর্ববঙ্গবাসী তাদের সালামু ওআলায়কুম জানাতে বাধ্য হবে।এছাড়া কাগমারী সম্মেলনে ভাসানী পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিলের দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী সোহ্‌রাওয়ার্দী সেই দাবি প্রত্যাখান করলে ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন। একই বছর ২৫ জুলাই তার নেতৃত্বে ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলে 'ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি' (ন্যাপ) গঠিত হয়। ন্যাপ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভাসানী প্রকাশ্যে বামপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন এবং এর পর থেকে সবসময় বাম ধারার রাজনীতির সাথেই সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ১৯৫৭-র ৭ অক্টোবর দেশে সামরিক শাসন জারি হলে আইয়ুব খান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সকল রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১২ অক্টোবর মাওলানা ভাসানীকে কুমুদিনী হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকায় ৪ বছর ১০ মাস কারারুদ্ধ থাকেন।বন্দী অবস্থায় ১৯৬২-র ২৬ অক্টোবর থেকে ২নভেম্বর পর্যন্ত বন্যা দুর্গতদের সাহায্য ও পাটের ন্যায্যমূল্যসহ বিভিন্ন দাবিতে অনশন ধর্মঘট পালন করেন। ৩ নভেম্বর মুক্তিলাভ করেন এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রাটিক ফ্রন্ট-এর রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত হন। ১৯৬৩-র মার্চ মাসে আইয়ুব খানের সাথে সাক্ষাত করেন। একই বছর ২৪ সেপ্টেম্বর চীনের বিপ্লব দিবস-এর উৎসবে যোগদানের জন্য ঢাকা ত্যাগ করেন এবং চীনে সাত সপ্তাহ অবস্থান করেন।১৯৬৪-র ২৯ ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি পুনরুজ্জীবিত করে দলের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং একই বছর ২১ জুলাই সম্মিলিত বিরোধী দল (কপ) গঠনে ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৫-র ১৭ জুলাই আইয়ুব খানের পররাষ্ট্র নীতির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন। ১৯৬৬-তে শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থাপিত ছয় দফা কর্মসূচীর বিরোধিতা করেন। ১৯৬৭-র ২২ জুন কেন্দ্রীয় সরকার রেডিও এবং টেলিভিশন থেকে থেকে রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ জারি করলে এর প্রতিবাদ করেন। ১৯৬৭-র নভেম্বর-এ ন্যাপ দ্বি-খন্ডিত হলে চীনপন্থি ন্যাপের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে মাওলানা ভাসানী বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামীদের মুক্তি দাবি করেন। ৮ মার্চ (১৯৬৯) পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে সেখানে পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে সাক্ষাত করে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র কায়েমের লক্ষ্যে একমত হন। ২৬শে ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান কর্তৃক আহুত গোলটেবিল বৈঠক প্রত্যাখান করে শ্রমজীবীদের ঘেরাও কর্মসূচী পালনে উৎসাহ প্রদান করেন। আইয়ুব খান সরকারের পতনের পর নির্বাচনের পূর্বে ভোটের আগে ভাত চাই, ইসলামিক সমাজতন্ত্র কায়েম ইত্যাদি দাবি উত্থাপন করেন।১৯৭০ সালের ৬-৮ আগস্ট বন্যা সমস্যা সমাধানের দাবিতে অনশন পালন করেন। অতঃপর সাধারণ নির্বচনে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।




    ১২ নভেম্বর (১৯৭০) পূর্ব পাকিস্তানে প্রলয়ঙ্কারী ঘুর্ণিঝড় হলে দুর্গত এলাকায় ত্রাণ ব্যবস্থায় অংশ নেয়ার জন্য ন্যাপ প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান। ১৯৭০ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকার পল্টন ময়দানে এক জনসভায় 'স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান' দাবি উত্থাপন করেন। ১৯৭১ এর মার্চ মাসে শেখ মুজিবুর রহমানের অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন প্রদান করেন এবং ১৮ জানুয়ারি ১৯৭১ পল্টন ময়দানে অণুষ্ঠিত জনসভায় স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানের জন্য তার প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত যান এবং মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। ২৫ মার্চ রাতে মওলানা ভাসানী সন্তোষে তার গৃহে অবস্থান করছিলেন। তিনি পাকিস্তান বাহিনীর দৃষ্টি এড়িযে টাঙ্গাইল ছেড়ে তার পিতৃভূমি সিরাজগঞ্জে চলে যান। পাকিস্তান বাহিনী তার সন্তোষের বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়। মওলানা ভাসানী মোজাফ্ফর ন্যাপ নেতা সাইফুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে নৌকাযোগে ভারত সীমানা অভিমুখে রওনা হন। অবশেষে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মইনুল হক চৌধুরীর সাহায্যে মওলানা ভাসানী ও সাইফুল ইসলাম ১৫/১৬ এপ্রিল পূর্ববঙ্গ অতিক্রম করে আসামের ফুলবাড়ী নামক স্থানে উপস্থিত হন। পরে তাদের হলদীগঞ্জ বিএসএফ ক্যাম্পে আশ্রয় দেয়া হয়। এরপর মওলানা ভাসানী ও সাইফুল ইসলামকে প্লেনে করে কলকাতায় পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং পার্ক স্ট্রিটের কোহিনুর প্যালেসের ৫তলার একটি ফ্ল্যাট তাদের অবস্থানের জন্য দেয়া হয়। ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে মওলানা ভাসানী একটি বিবৃতি প্রদান করেন যা ভারতীয় বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এছাড়া মাওলানা ভাসানী চীনের নেতা মাও সে তুং, চৌ এন লাই এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে তার বার্তা পাঠিয়ে তাদের অবহিত করেন যে পূর্ববঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ব্যাপকহারে গণহত্যা চালাচ্ছে। সেজন্য তিনি প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে অণুরোধ করেন এই মর্মে যে, তিনি যেন পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ না করেন। উপরন্তু মওলানা ভাসানী প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবার আহ্বান জানান। ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল মাওলানা ভাসানী সোভিয়েত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কাছে পাকিস্তান বাংলাদেশের জনগণের ওপর যে বর্বরোচিত অত্যাচার চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অণুরোধ করেন।৩১ মে মাওলানা ভাসানী এক বিবৃতিতে বলেন,“বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ দখলদার বাহিনীর সঙ্গে জীবনমরণ সংগ্রামে লিপ্ত। তারা মাতৃভূমি রক্ষার জন্য বদ্ধপরিকর। তারা এই সংগ্রামে জয়লাভ করবেই। ৭ জুন মওলানা ভাসানী এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের সব অঞ্চল আজ দশ লাখ বাঙালির রক্তে স্নাত এবং এই রক্তস্নানের মধ্য দিয়েই বাংলার স্বাধীনতা আসবে

    বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সর্বদলীয় চরিত্র দেয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে আট সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয় যার সভাপতি ছিলেন মওলানা ভাসানী। ওই উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলেন - ১) তাজউদ্দীন আহমদ, ২) মণি সিংহ, ৩) অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ, ৪) মনোরঞ্জন ধর প্রমুখ।মওলানা ভাসানীর আব্দুল  হামিদ খানের সভাপতিত্বে ওই উপদেষ্টা কমিটির সভায় এই মর্মে অভিমত ব্যক্ত করা হয় যে, পূর্ববঙ্গের পূর্ণ স্বাধীনতা ব্যতিরেক অন্য কোন প্রকার রাজনৈতিক সমাধান গ্রহণযোগ্য হবে না।



     ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি ঢাকায় ফিরে তিনি সর্বপ্রথম যে দাবিটি তোলেন তা হলো বাংলাদেশ ভূখন্ড থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অপসারণ। ঐ বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি হককথা নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রকাশনা শুরু করেন। অচিরেই পত্রিকাটির প্রচার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। পত্রিকাটি অল্পদিন পরেই নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মওলানা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইন-শৃঙখলা পরিস্থিতির অবনতি এবং খাদ্য সংকটের প্রতিবাদে অনশন শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি হুকুমত-ই-রববানী তরিকার প্রতিষ্ঠা করেন এবং আওয়ামী লীগ সরকার এবং ভারত-সোভিয়েতের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেন। ১৯৭৪ সালের এপ্রিল মাসে ছয়টি দল নিয়ে মওলানার নেতৃত্বে একটি যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হয়। এ ফ্রন্ট ভারত-বাংলাদেশ সীমানা চুক্তি অবিলম্বে রদ এবং বিরোধী দলের বিরুদ্ধে নির্যাতনমূলক কর্মকান্ড বন্ধ করার দাবি জানায়। ৩০ জুন মওলানাকে গ্রেপ্তার করে টাঙ্গাইল জেলার সন্তোষে স্বীয় বাসভবনে গৃহবন্দী করা হয়। মওলানা ভাসানী ফারাক্কা চুক্তিকে বাংলাদেশের স্বার্থের পরিপন্থি বলে মনে করেন। তিনি ১৯৭৬ সালের ১৬ মে রাজশাহী থেকে ফারাক্কা অভিমুখে এক লং মার্চে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৬ সালের ২ অক্টোবর তিনি খোদায়ী খিদমতগার নামে একটি নতুন সংগঠন গড়ে তোলেন এবং সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি সন্তোষে একটি কারিগরি শিক্ষা কলেজ, মেয়েদের একটি স্কুল এবং একটি শিশু কেন্দ্র স্থাপন করেন। তিনি পাঁচবিবিতে নজরুল ইসলাম কলেজ এবং কাগমারিতে মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। আসামে তিনি ইতোপূর্বে ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন। ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।

    এরপর ১৯৫৭ সালের জুলাই মাসে আওয়ামী লীগৈর ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ভাসানী   সোহরাওয়ার্দী দলের  বিরোধ আরো ঘনীভূত হয়  শেখ মুজিবের নেতৃত্বে সোহরাওয়ার্দী দলের  তরুণতুর্কিরা ভাসানী গ্রপের কয়েকজন সদস্যকে পিটিয়ে আহত করে।  অবস্থায় মাওলানা ভাসানী বৈঠক থেকে ওয়াক আউট করেন। ২৭ জুলাই পুরনো ঢাকার একটি সিনেমা হলে অধিবেশন ডেকে তিনি ‘পূর্ব-পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠন করেন। 
    তাঁর দলে আওয়ামী মুসলিম লীগের টিকেটি নির্বাচিত ৩০ জন পরিষদ সদস্য ছিলেন। আওয়ামী লীগের দ্বিধাবিভক্তির ফলে কৃষক শ্রমিক পার্টি আবার চাঙ্গা হয়ে ওঠে। কেন্দ্রে ইসকান্দার মীর্জার নতুন চালে ১৯৫৭ সালের ১০ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রিসভার পতন ঘটে। ১৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন মুসলিম লীগের আই আই চুন্দ্রীগড়। এর মাত্র ৫৯ দিন পর ১৬ ডিসেম্বর চুন্দ্রীগড়ের মন্ত্রিসভাকে বরখাস্ত করে রিপাবলিকান পার্টির ফিরোজ খান নুনকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। ফিরোজ খান নুন ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র অনুযায়ী ১৯৫৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন।


    সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত http://www.alokrekha.com                                                                                                   

    12 comments:

    1. সানজিদা তুমি লেখাটা পড়ালাম। খুব বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছো মূল নেতাদের জীবনী সহ। তুমিতো নতুন প্রজন্মের জন্য লিখছো , ওঁদের জীবনী ও জীবনের আদর্শ নতুন প্রজন্মের জানা দরকার। ছবি দিয়ে লেখা আরো গ্রণযোগ্য হয়েছে। তুমি লেখো তোমার এই লেখা বাংলার ইতিহাসে স্মরণীয় হবে এ আমার বিশ্বাস। অনেক শুভাশীষ ,

      ReplyDelete
    2. এই লেখা বাংলার স্বধীনতার ইতিহাসে স্মরণীয় হবে। দারুন তথ্য দুর্লভ ছবি। বিশেষ করে পত্রিকা। অনেক শুভ কামনা। এগিয়ে যান আমরা পাঠকরা আছি সঙ্গে।

      ReplyDelete
    3. আমি খুব দুঃখিত। আসলে এই প্রথম আমি মন্তব্য করলাম তাই এই ভুল হয়েছে। আমি ভেবেছিলম এভাবে করতে হয়। আমার মনে হয় আরো অনেকেই এই ভুল করে থাকতে পারেন ,কারণ Comment as: জায়গাটা একটু tricky । ভুল শুধরে দেবেন জন্য ধন্যবাদ।

      ReplyDelete
    4. অতি চমৎকার উপস্থাপন। ইতিহাসকে মনোরঞ্জক ভাবে উপস্থাপন করার জন্য সানজিদা রুমিকে সাধুবাদ জানাই।এটা বই আকারে প্রকাশিত হচ্ছে আশা করি। আলোকরেখাকে অনেক ধন্যবাদ।

      ReplyDelete
    5. অসাধারণ -অনন্য লেখাটার ধন্যবাদ যথেষ্ঠ নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে স্মরণীয় হবে। দারুন তথ্য দুর্লভ ছবি। বিশেষ করে পত্রিকা। অনেক শুভ কামনা।আরো ভালো ভালো লেখা পাই

      ReplyDelete
    6. সানজিদা অনন্য লেখাটার জন্য ধন্যবাদ যথেষ্ঠ নয়-বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে স্মরণীয় হবে তাই নয় , একটা দলিল। অনেক ভালোবাসা আর শুভ কামনা!

      ReplyDelete
    7. এত আগের পত্রিকা ছবি কোথায় পেলেন ? বিস্তারিত ইতিহাস কিন্তু কোথাও একঘেয়েমি নেই। গল্পের ছলে লেখা। প্লিস বই আকারে বের করবেন ,নুতুন প্রজন্মের জন্য। অনেক সু কামনা

      ReplyDelete
    8. অনেক ধন্যবাদ পাঠক আমাকে উৎসাহ দেবার জন্য আর শেয়ার করার জন্য। আমার এই লেখা পড়ে একজনও যদি উপকৃত হয়। তবেই নিজেকে ধন্য মনে করবো..সবাইকে শুভেচ্ছা আর সবাই ভালো থাকবেন। ভালো থাকাটাই সব। জীবন মানে বেঁচে থাকার জীবন্ত উৎসব

      ReplyDelete
    9. তথ্য দুর্লভ ছবি।অনন্য লেখা। নুতুন প্রজন্মের জন্য স্বাধীনতার ইতিহাসে স্মরণীয় দলিল হবে এটা। অনেক শুভ কামনা ! ভালো লেখার অপেক্ষায় রইলাম

      ReplyDelete
    10. সানজিদা দারুন সব তথ্য ও দুর্লভ ছবি নিয়ে খুব ভালো লেখা! আমি জানি তুমি নুতুন প্রজন্মের জন্য লিখছো।বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে স্মরণযোগ্য হবে । বিশেষ করে স্বাধীনতার ইতিহাসে যারা অশেষ অবদান রেখেছেন তাঁদের জীবনী। স্বাধীনতার ভিত গঠনের অন্যতম নেতা মওলানা ভাসানীকে বিশদভাবে উপস্থাপন করেছো তাঁর মূল্যবান ছবি দিয়ে। তা সত্যি প্রশংসনীয়।অনেক অনেক শুভ কামনা।

      ReplyDelete
    11. তুমি নুতুন প্রজন্মের জন্য লিখছো বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস।তথ্য ও দুর্লভ ছবি নিয়ে খুব ভালো হচ্ছে লেখা আমি জানি তুমি শেষ অবদি লিখে যেতে পারবে কোন পক্ষপাত ছাড়াই। এ বিশ্বাস তুমি অর্জন করেছো। বাংলার ইতিহাসে যাদের বিশেষ অবদান আছে তাঁদের জীবনীও বিশদভাবে উপস্থাপিত হয়েছে তোমার লেখায়। বিশেষ করে স্বাধীনতার অন্যতম নেতা মওলানা ভাসানী'র জীবনী। অনেক শুভ কামনা ! ভালো থেক ভালো লেখো।

      ReplyDelete
    12. ইতিহাস যে এত সাবলীল হয় তা সানজিদা রুমির লেখা না পড়লে জানতাম না। আমরা পড়ুয়া পরিবারটি আলোক রেখার ভক্ত। সানজিদা রুমিকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের কথা মনে করে লিখছেন। সবাই ভাবে নুতুন প্রজন্ম কি আর করে সারাক্ষন chat করে, ইয়াবা খায়, নেশা করে. োর উচ্ছন্নে গেছে। আমরা আলোক রেখা পড়ি।

      ReplyDelete

    অনেক অনেক ধন্যবাদ