আমার বিশ্বের
প্রেম উপাখ্যান গুলো প্রকাশ করার কারণ যে ভালবাসার কথা আমরা জানতে পারি ওই সব অনবদ্য
পড়েন যার জন্য জীবন প্রাণ ও তুচ্ছ। ভ্যালোবাসা এমনই। ভালোবাসা অনেক শক্তিশালী।
ভারত পুরাণ: উর্বশী ও পুরূরবার প্রেম উপাখ্যান
একবার রাজা
পুরূরবা ইন্দ্রের রাজসভায় আমন্ত্রিত হলেন। ইন্দ্র আয়োজন করলেন নৃত্য-গীতের। সেখানে
নৃত্য পরিবেশন করেন উর্বশী নামের এক অপ্সরা। উর্বশীকে দেখে রাজা পুরূরবা মুগ্ধ নয়নে
তাকিয়ে থাকলেন। কী অপরূপ তার রূপের মাধুর্য! আর কী চমৎকার তার নৃত্যগীত! পুরূরবার মুগ্ধ
নয়নে নয়ন পড়তেই চমকে যায় উর্বশী। এতো মুগ্ধ নয়নে কেউ আগে তো দেখেনি তাকে! তার বুকের
ভেতর কেমন যেন অদ্ভুত অনুভূতি হয়। আর তাতেই সে ভুল করে ফেলে নাচের মুদ্রায়। ব্যাপারটা
ইন্দ্রের চোখ এড়িয়ে যায় না। সে উর্বশীকে মর্তবাসী হওয়ার অভিশাপ দেয়। ফলে ছাড়তে হলো
স্বর্গ। যেহেতু পুরূরবার কারণেই উর্বশীকে স্বর্গালোক ছাড়তে হয়েছে। আর উর্বশীর প্রেমে
পড়ে গেছে পুরূরবা। তাই উর্বশীকে পুরূরবা নিজের স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করতে ইচ্ছা প্রকাশ
করেন। উর্বশীও পুরূরবার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছিলো। তাই কিছু শর্ত সাপেক্ষে পুরূবার
স্ত্রী হতে রাজি হয়ে যান। প্রথম শর্ত হলো, উর্বশী যেন কখনো পুরূরবাকে নগ্ন অবস্থায়
না দেখেন। দ্বিতীয়, শুধু মাত্র উর্বশী কামাতুরা হলেই, পুরূরবা তাঁর সাথে মিলিত হতে
পারবেন। তৃতীয় শর্ত, উর্বশীর শয্যার পাশে দুটি মেষ শাবক বাঁধা থাকবে এবং মেষ শাবক দুটিকে
পুরূরবা নিজ দায়িত্বে চুরি থেকে রক্ষা করতে হবে। চতুর্থ শর্ত হচ্ছে, পুরূরবা মাত্র
এক সন্ধ্যা ঘি আহার করবেন। পুরূরবা ভাবলেন এ আর এমন কি! শর্ত মেনে নিলেন। হয়ে গেলো
তাঁদের বিবাহ। সুখে শান্তিতেই তারা বসবাস করছিলেন। কিন্তু দেবতারা স্বর্গে উর্বশীর
অনুপস্থিতি অনুভব করতে পেরে ভাবলেন তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। কিন্তু একজনের স্ত্রীকেতো
আর চাইলেই নিয়ে যাওয়া যায় না। কী করা যায়! এক রাত্রিতে বিশ্বাবসু নামক এক গন্ধর্ব উর্বশীর
শয্যার পাশে রাখা মেষ শাবক দুটিকে চুরি করে নিলো। উর্বশী হঠাৎ জেগে উঠে দেখে মেষ শাবক
দুটি নেই। পুরূরবাকে ডেকে তুললেন কাঁদতে। পুরূরবা দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠতে গিয়ে খেয়ালই
করেননি তার বস্ত্র বিছানায় রয়ে গেছে। বিবস্ত্র অবস্থাতেই মেষ খুঁজতে শুরু করলেন। এই
সময় দেবতারা আকাশে বজ্রপাত ঘটান। বজ্রপাতে বিদ্যুতের আলোতে উর্বশী পুরূরবাকে নগ্ন
অবস্থায় দেখতে পেয়ে স্বর্গের দিকে উড়ে চলে যান।
উর্বশীর বিরহে
পুরূরবা পাগল প্রায়। খুঁজতে লাগলেন ঘুরে তাকে। শেষে কুরুক্ষেত্রে এসে পুরূরবা দেখেন
চারজন অপ্সরার সাথে স্নান সারছেন উর্বশী। পুরূরবা উর্বশীকে নিজের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে
যেতে চান। কিন্তু এটা অসম্ভব, স্পষ্ট জানিয়ে দেয় উর্বশী। বলে, দেবতাদের আদেশের বাইরেতো
যেতে পারবো না। তবে বছরের শেষ রাতে পুরূরবা উর্বশীর সাথে মিলিত হতে পারবে এই প্রতিশ্রুতি
দেয় সে। এরপর থেকে পুরূরবা বছরান্তে একরাত্রির জন্য উর্বশীকে কাছে পেতেন। তাদের মিলনের
ফলে উর্বশী'র গর্ভে মোট সাতটি সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল। এই সন্তানরা হলেন— আয়ু, অমাবসু,
বিশ্বায়ু, স্রুতায়ু, দৃঢ়ায়ু, বলায়ু ও শতায়ু। দেবতারা উর্বশীর প্রতি পুরূরবার প্রেম
দেখে উর্বশীর সঙ্গী হিসাবে ইন্দ্রলোকে নিয়ে যান। এবং পুরূরবা মর্তের মায়া ত্যাগ করে
উর্বশীকে চিরজীবন কাছে পাওয়ার জন্য ইন্দ্রলোকে বসবাস করতে থাকেন। যাইহোক, এই উর্বশী
পুরাণের আরেক ঘটনায় যুক্ত আছেন। ইন্দ্র অর্জুনকে স্বর্গলোকে নিয়ে গেলে, সেখানে অর্জুনকে
দেখে উর্বশী প্রেম নিবেদন করেন। কিন্তু অর্জুন উর্বশীকে মাতৃজ্ঞান করে তার প্রেম প্রত্যাখ্যান
করে। এ কারণে উর্বশী অর্জুনকে এক বছর নপুংসক হওয়ার অভিশাপ দেন। যার কারণে মৎস্যরাজ
বিরাট-ভবনে অর্জুন নপুংশক হয়ে বৃহন্নলা নাম ধারণ করে অতিবাহিত করেন একটি বছর। এটা একটা
চিরন্তন প্রেম উপাখ্যান। যুগ ধরে চলে আসছে।
পৃথিবীর অনেক প্রেম গাঁথার মত ওদের প্রেম ও জন বিদীত।
সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত
পৃথিবীতে কত রকম প্রেম কাহিনী আছে। আলোক রেখা না পড়লে হয়তো অজানা থাকতো। আরো কাহিনী পোস্ট করার অনুরুধ রইলো।
ReplyDelete