রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি,ঔপন্যাসিক,নাট্যকার,ছোটগল্পকার, চিত্রকর,সংগীতস্রষ্টা,প্রাবন্ধিক,অভিনেতা,কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক।তাঁকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়।রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব,কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়।তাঁর
জন্ম ৭ই মে, ১৮৬১ ও মৃত্য ৭ই আগস্ট, ১৯৪১ ২৫ বৈশাখ,
১২৬৮-২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কলকাতার এক ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিবান ব্রাহ্ম পিরালী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের জন্ম জোড়াসাঁকোর ৬ নং দ্বারকানাথ ঠাকুর লেনের পারিবারিক বাসভবনে। রবীন্দ্রনাথের
পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭–১৯০৫) এবং মাতার নাম সারদা দেবী (১৮৩০–১৮৭৫)।
দেবেন্দ্রনাথ ছিলেন তাঁর বন্ধু তথা সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায় প্রবর্তিত
ব্রাহ্মধর্মের প্রধান সংগঠক ও অনুশাসনকর্তা। রামমোহন রায়ের মৃত্যুর পর
দেবেন্দ্রনাথই হয়ে ওঠেন ব্রাহ্মসমাজের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব। তাঁর অনুগামীরা
তাঁকে মহর্ষি অভিধায় ভূষিত করে।আমৃত্যু দেবেন্দ্রনাথ ছিলেন আদি ব্রাহ্মসমাজের
নেতা।অস্পৃশ্যতা প্রথার কারণে কেবল মাত্র পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ)
যশোর-খুলনার পিরালী ব্রাহ্মণ কন্যারাই ঠাকুর পরিবারে বধূ হয়ে আসতেন।
এবং পিতামহ প্রিন্স
দ্বারকানাথ ঠাকুর। এই পরিবারের পূর্বপুরুষ পূর্ববঙ্গ থেকে ব্যবসায়ের
সূত্রে কলকাতায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন। দ্বারকানাথ ঠাকুরের চেষ্টায় এ বংশের
জমিদারি এবং ধনসম্পদ বৃদ্ধি পায়। ইংরেজি শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে লালিত এবং
আত্মপ্রতিষ্ঠিত দ্বারকানাথ ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি জনহিতকর কাজেও সাফল্য অর্জন
করেন। উনিশ শতকের বাঙালির নবজাগরণ এবং ধর্ম ও সমাজ-সংস্কার আন্দোলনে জোড়াসাঁকোর
ঠাকুর পরিবারের ভূমিকা বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য। এ যুগের অন্যতম সমাজ-সংস্কারক এবং
একেশ্বরবাদের প্রবক্তা রামমোহন রায় ছিলেন
দ্বারকানাথের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। রামমোহন রায়ের আদর্শ দ্বারকানাথ, তাঁর পুত্র
দেবেন্দ্রনাথ এবং দৌহিত্র রবীন্দ্রনাথের ওপর এক অভাবনীয় প্রভাব বিস্তার করে।
নবজাগ্রত বাঙালি সমাজের পুরোধা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের
পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দু কলেজে শিক্ষালাভ করেন। দ্বারকানাথ যখন ব্যবসায়
এবং জমিদারি পরিচালনায় ব্যাপৃত, সে সময় পুত্র দেবেন্দ্রনাথের মধ্যে সঞ্চারিত হয় আধ্যাত্মিক চেতনা।
ঈশ্বর-ব্যাকুলতায় তিনি ইউরোপীয় ও ভারতীয় দর্শনের প্রতি নিবিষ্ট হন। অবশেষে উপনিষদ চর্চার মাধ্যমে তাঁর আত্মা স্থিত হয়
এবং এক বিশুদ্ধ সত্যের উপলব্ধিতে তাঁর মধ্যে জেগে ওঠে আত্মপ্রত্যয়।
দেবেন্দ্রনাথের এই বৈশিষ্ট্যই আকৃষ্ট করে পুত্র রবীন্দ্রনাথকে। তাঁর সমগ্র মনোজগতে
এবং ব্যবহারিক জীবনে পিতার প্রভাব ছিল অত্যন্ত গভীর। পিতার মধ্যেই রবীন্দ্রনাথ
দেখেছিলেন একজন আদর্শ ব্যক্তিকে, যিনি জাগতিক বিষয়ে নিষ্ঠাবান অথচ নিরাসক্ত, প্রখর যুক্তিবাদী
কিন্তু হূদয়বান।
সততায়, ধর্মবোধে, ঋষিসুলভ চারিত্রিক গুণে এবং উদার আভিজাত্যে দেবেন্দ্রনাথ ছিলেন অনন্য।
রবীন্দ্রনাথের সমগ্র জীবন ও সাহিত্যসাধনায় দেবেন্দ্রনাথের প্রভাব ছিল ব্যাপক। সে
যুগে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার ছিল সাহিত্য-সংস্কৃতি, মুক্তচিন্তা ও প্রগতিশীল
ভাবধারার অন্যতম পীঠস্থান। একদিকে দেবেন্দ্রনাথের ধর্মানুশীলন এবং তাঁর পরিবারের
স্বাদেশিকতা, সঙ্গীত-সাহিত্য ও শিল্পচর্চার পরিশীলিত আবহ, অন্যদিকে দেশের
নানাবিধ পরিবর্তন রবীন্দ্রনাথের জীবনে গভীর তাৎপর্য বয়ে আনে।
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন পিতামাতার চতুর্দশ সন্তান।জোড়াসাঁকোর
ঠাকুর পরিবার ছিল ব্রাহ্ম আদিধর্ম মতবাদের প্রবক্তা।রবীন্দ্রনাথের পূর্ব পুরুষেরা
খুলনা জেলার রূপসা উপজেলা পিঠাভোগে বাস করতেন।১৮৭৫ সালে মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে
রবীন্দ্রনাথের মাতৃবিয়োগ ঘটে।ছেলেবেলায় রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য পত্রিকা, সঙ্গীত ও
নাট্যানুষ্ঠানের এক পরিবেশে প্রতিপালিত হন। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার ছিল সেযুগের
বিদ্যোৎসাহী ও শিল্পোৎসাহী সমাজে এক বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী। রবীন্দ্রনাথের
বড়োদাদা দ্বিজেন্দ্রনাথ ছিলেন একজন সম্মানীয় দার্শনিক ও কবি। তাঁর মেজদাদা
সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন সেযুগের অভিজাত ও শ্বেতাঙ্গ-প্রধান ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের
প্রথম ভারতীয় সদস্য। নতুনদাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ছিলেন একজন প্রতিভাবান
সংগীতস্রষ্টা ও নাট্যকার।তাঁর এক দিদি স্বর্ণকুমারী দেবী ছিলেন এক স্বনামধন্য
ঔপন্যাসিক। বালক "রবি"-র উপর এঁদের সকলের প্রভাব ছিল অপরিসীম।
জ্যোতিরিন্দ্রনাথের স্ত্রী কাদম্বরী দেবী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের থেকে সামান্য বড়ো।
তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথের বন্ধুস্থানীয় এবং তাঁর রচনার এক অনুপ্রেরণা। ১৮৮৪ সালে
কাদম্বরী দেবী আত্মহত্যা করেন। কাদম্বরী দেবীর মৃত্যু বহু বছর রবীন্দ্রনাথের মনকে
অশান্ত করে রেখেছিল। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যেও এই মৃত্যু এই চিরস্থায়ী ছাপ রেখে
যায়।
পিতা দেবেন্দ্রনাথ দেশভ্রমণের নেশায় বছরের অধিকাংশ
সময় কলকাতার বাইরে অতিবাহিত করতেন। তাই ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হয়েও
রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা কেটেছিল ভৃত্যদের অনুশাসনে।শৈশবে রবীন্দ্রনাথ কলকাতার
ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল অ্যাকাডেমি এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে কিছুদিন করে
পড়াশোনা করেছিলেন।কিন্তু বিদ্যালয়-শিক্ষায় অনাগ্রহী হওয়ায় বাড়িতেই গৃহশিক্ষক
রেখে তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা
বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেশি
স্বচ্ছন্দবোধ করতেন রবীন্দ্রনাথ।
জীবনের প্রথম দশ বছরে পিতার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার
সুযোগ পাননি রবীন্দ্রনাথ। এই সময় দেবেন্দ্রনাথ প্রায়শই উত্তর ভারত, ইংল্যান্ড ও অন্যান্য
স্থানে পর্যটনে রত থাকতেন।এদিকে রবীন্দ্রনাথ মূলত পারিবারিক গণ্ডীর আবদ্ধ থাকতেন।
একমাত্র স্কুলে যাওয়া ছাড়া অন্য সময় বাড়ির বাইরে বের হওয়া নিষিদ্ধ ছিল। ফলত
বাইরের জগৎ ও প্রকৃতির সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকতেন বালক
রবীন্দ্রনাথ। ঠাকুরবাড়ির ভৌতিক ও রহস্যময় সত্ত্বাটিও রবীন্দ্রনাথকে সন্ত্রস্ত
করে রাখত। জীবনের এই পর্বে বাড়ির ভৃত্যদের তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হন
রবীন্দ্রনাথ। তাঁর নিজের ভাষায় এ ছিল এক "ভৃত্যরাজক তন্ত্র"।জানা যায়, এক এক সময় ছোটোদের
শান্ত করতে ভৃত্যেরা তাদের মাথা পানীয় জলের বড়ো বড়ো পাত্রের মধ্যে চুবিয়ে
রাখত।ভৃত্যদের সন্তুষ্ট রাখতে বালক রবীন্দ্রনাথ অল্প আহার করতেন। শ্যাম নামের একটি
চাকর তাঁকে একটি খড়ির রেখার গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ করে রাখত আর ভয় দেখানোর জন্য
রামায়ণের সীতাহরণের উপাখ্যান এবং রক্তপিপাসু ডাকাতদের ভীতিপ্রদ গল্পগুলি শোনাতো।
রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা আরম্ভ হয় দাদা হেমেন্দ্রনাথের
হাতে। ছেলেবেলায় রবীন্দ্রনাথ শারীরিকভাবে সুস্থসবল ও বলবান ছিলেন – তিনি গঙ্গায়
সাঁতার কাটতেন, পাহাড়ি রাস্তায় হেঁটে বেড়াতেন এমনকি বাড়িতে জুডো ও কুস্তি অনুশীলন করতেন।
বাংলা ভাষায় শারীরস্থান, অঙ্কন, ইংরেজি ভাষা (সেই সময় তাঁর সর্বাপেক্ষা অপ্রিয় বিষয়), ভূগোল, ইতিহাস, সাহিত্য, গণিত ও সংস্কৃত চর্চা
করতেন গৃহে ও বিদ্যালয়ে।অবশ্য বিদ্যালয়ের ধরাবাঁধা শিক্ষাব্যবস্থা তাঁকে আকৃষ্ট
করে রাখতে পারেনি। নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল অ্যাকাদেমি, ওরিয়েন্টাল সেমিনারি ও শেষে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে কিছুকাল পড়াশোনার পর
তিনি অবশেষে বিদ্যালয়ে যেতে অস্বীকার করেন। বিদ্যালয়ের নিষ্প্রাণ শিক্ষাব্যবস্থা
পরবর্তীকালেও তাঁর দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল। বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়-শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি; গৃহশিক্ষক রেখে
বাড়িতেই তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
আট বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ কাব্যরচনা শুরু করেন। তাঁর
এক দাদা তাঁকে এই কবিতাগুলি বাড়ির অন্য সকলকে পড়ে শোনাতে বলতেন। রবীন্দ্রনাথের
এক শ্রোতা ছিলেন জনৈক ব্রাহ্ম জাতীয়তাবাদী, সংবাদপত্র সম্পাদক ও
হিন্দুমেলা সংগঠক। এগারো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের উপনয়ন দীক্ষানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত
হয়। ব্রাহ্মণ্য সংস্কার অনুযায়ী মস্তক মুণ্ডন করে উপবীত ধারণ করেন রবীন্দ্রনাথ।এরপর
১৮৭৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পিতার সঙ্গে কয়েক মাসের জন্য কলকাতার বাইরে যাওয়ার
সুযোগ হয় রবীন্দ্রনাথের। প্রথমে তাঁরা যান শান্তিনিকেতনের পারিবারিক এস্টেটে।১৮৬৩
সালে এখানকার আম্রকুঞ্জ ও উদ্যানমধ্যে দেবেন্দ্রনাথ একটি দুই কামরার গৃহ নির্মাণ
করেছিলেন।প্রকৃতির সান্নিধ্যে এই দিনগুলি সম্পর্কে পরে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন: "যাহা দেখিলাম না তাহার
খেদ মিটিতে বিলম্ব হইল না–যাহা দেখিলাম তাহাই আমার পক্ষে যথেষ্ট হইল। এখানে
চাকরদের শাসন ছিল না। প্রান্তরলক্ষ্মী দিক্চক্রবালে একটি মাত্র নীল রেখার গণ্ডী
আঁকিয়া রাখিয়াছিলেন, তাহাতে আমার অবাধসঞ্চরণের কোনো ব্যাঘাত করিত না।"
কয়েক সপ্তাহ সেখানে অতিবাহিত করে তাঁরা আসেন
অমৃতসরে। সেখানে হরমন্দির সাহিবের নিকট অবস্থান করে তাঁরা একটি শিখ গুরুদ্বারে
প্রার্থনা করেন। এই সময় রবীন্দ্রনাথ পাঠ করেন ইংরেজি ও সংস্কৃত গ্রন্থাবলি, বেঞ্জামিন
ফ্র্যাঙ্কলিন প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের জীবনী, এবং এডওয়ার্ড গিবন
রচিত দ্য হিস্ট্রি অফ দ্য ডিক্লাইন অ্যান্ড ফল অফ দ্য রোমান এম্পায়ার।এপ্রিল
মাসের মাঝামাঝি সপুত্র দেবেন্দ্রনাথ যাত্রা করেন হিমালয়ের শৈলশহর ডালহৌসির
(বর্তমানে হিমাচল প্রদেশ রাজ্যে জম্মু ও কাশ্মীর-হিমাচল প্রদেশ সীমান্তের নিকটে
অবস্থিত) উদ্দেশ্যে। ডালহৌসিতে ২,৩০০ মিটার (৭,৫০০ ফুট) উচ্চতায় বক্রোটা পাহাড়চূড়ার একটি বাংলোতে অবস্থান করেন তাঁরা।
এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিমোহিত হন রবীন্দ্রনাথ।ছেদ পড়ে না পাঠাভ্যাসেও।
হিমশীতল অতি প্রত্যুষে উঠে সংস্কৃত পড়তে বসতেন তিনি; দুপুরে মধ্যাহ্নভোজের
ছুটি পেতেন। তারপর আবার চলত পড়া। অবশ্য পড়তে পড়তে প্রায়শই ঘুমিয়ে পড়তেন
রবীন্দ্রনাথ।দুই মাস ডালহৌসিতে কাটিয়ে পিতার সঙ্গে কলকাতায় ফিরে আসেন তিনি।
মাত্র আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন।১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী
পত্রিকা-এ তাঁর "অভিলাষ" কবিতাটি প্রকাশিত হয়।এটিই ছিল তাঁর প্রথম
প্রকাশিত রচনা।১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে
যান।১৮৭৩ সালে এগারো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের উপনয়ন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।এরপর তিনি
কয়েক মাসের জন্য পিতার সঙ্গে দেশভ্রমণে বের হন।প্রথমে তাঁরা আসেন শান্তিনিকেতনে।এরপর
পাঞ্জাবের অমৃতসরে কিছুকাল কাটিয়ে শিখদের উপাসনা পদ্ধতি পরিদর্শন করেন।পরে পুত্রকে
নিয়ে দেবেন্দ্রনাথ যান পাঞ্জাবেরই (অধুনা ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যে অবস্থিত)
ডালহৌসি শৈলশহরের নিকট বক্রোটায়।এখানকার বক্রোটা বাংলোয় বসে রবীন্দ্রনাথ পিতার
কাছ থেকে সংস্কৃত ব্যাকরণ, ইংরেজি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান ও ইতিহাসের নিয়মিত পাঠ নিতে শুরু করেন।দেবেন্দ্রনাথ তাঁকে
বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জীবনী, কালিদাস রচিত ধ্রুপদি সংস্কৃত কাব্য ও নাটক এবং উপনিষদ্ পাঠেও উৎসাহিত করতেন।১৮৭৭
সালে ভারতী পত্রিকায় তরুণ রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা প্রকাশিত হয়।এগুলি
হল মাইকেল মধুসূদনের "মেঘনাদবধ কাব্যের সমালোচনা", ভানুসিংহ ঠাকুরের
পদাবলী এবং "ভিখারিণী" ও "করুণা" নামে দুটি গল্প।এর মধ্যে
ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।এই কবিতাগুলি রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক
পদাবলির অনুকরণে "ভানুসিংহ" ভণিতায় রচিত।রবীন্দ্রনাথের
"ভিখারিণী" গল্পটি (১৮৭৭) বাংলা সাহিত্যের প্রথম ছোটগল্প।১৮৭৮ সালে
প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্যগ্রন্থ তথা প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ
কবিকাহিনী।এছাড়া এই পর্বে তিনি রচনা করেছিলেন সন্ধ্যাসংগীত (১৮৮২) কাব্যগ্রন্থটি।
রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত কবিতা "নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ" এই কাব্যগ্রন্থের
অন্তর্গত।
ক্রমশঃ---
সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত
http://www.alokrekha.com
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বিস্তারিত লেখা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
ReplyDelete