আয়না ও সুন্দরী
মেহরাব
রহমান
 ও আমার ব্যক্তিগত
আয়না!
 ক্রমশ তুমি সরে যাচ্ছ দূরে। 
 আমারই ছিলে অথচ আমারই বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছ ঘুরে
 অবাধ্য আয়না, তুমি মানছ না কোনো নিয়ম-কানুন।
 আমার জন্য নিবেদিত নও একেবারে। 
 কে জানে হয়তো
নিমগ্ন এখন অন্য কোনোখানে।
 নির্লজ্জ, নির্লিপ্ত, বেহায়া আয়না শেষ কি হলো দেনা-পাওনা?
 আজকাল আমার গুণগান গাও না। 
 নগ্ন করো আমাকে যখন-তখন।
 আমার অনিন্দ্য দেহলতা জুড়ে এখন
 দাও না তুমি দ্যোতনায়
দোলা
 বাজাও না গহিন রাতে
 আধো আলো আধো অন্ধকারে দরবারি কানাড়া।
 সুকুমার দেহে, পরতে পরতে তোলো না ঝড় 
 মীড়, গমক, মূর্ছনা।
 একদিন মাহেন্দ্রক্ষণে আয়না,
 তুমিই আমাকে ছেয়ে ছিলে অপার মাধুরী রঙে
 আজ এই অবেলায়
আমাকে শুধুই ভেংচি কাটো।
 ছড়াও আমার ছায়ায় নীরস গদ্যের জঞ্জাল।
 ওহে অহঙ্কারী আয়না 
 এত অহমিকা কেন?
 নামেনি কি ধ্বস শরীরে
তোমারও?
 সময়ের সাথ সাথে যাওনি কি বুড়িয়ে এখনো?
 পড়ে কি মনে আমার
প্রথম বিম্বিত ষোড়শী যৌবন
 তিরতির কাঁপছিল তোমার শরীরে 
 ফুটছিল ভোরের স্বর্ণাভ আলো ধীরে ধীরে;
 জয়গানে, উল্লাসে 
 পাহাড়ের বুক চিরে 
 মোহনীয় ক্ষীণকটি উপত্যকা ধরে 
 আমার ঘোর কৃষ্ণ চুল নেমে এসেছিল পলে পলে 
 চুম্বক আকর্ষক নিতম্ব উত্তলে। 
 সময় অতলে হারিয়েছি কত কিছু। 
 তারপরও, ও প্রিয় আয়না
 তোমাকে লালন করেই আমার সৌন্দর্য হয়েছে লোভনীয় নানা বসন্তে। 
তারপর
এসেছিল নেমে মিলন রাত্রি।
মনে
কি পড়ে, তার সাথে আমার 
প্রথম
জলজ অবগাহনের কথা?
সেই
রাত্রি! অলঙ্ঘ্য রাত্রি! বিশৃঙ্খল মাতোয়ারা রাত।
আয়না
ও আমার সুপ্রিয় আয়না। তখন। 
সেইক্ষণ।
তোমার সামনে লজ্জা ছিল না মোটেও।
আভিজাত্য
বলি হ’ল যুপকাষ্ঠে অকাতর।ে
জানালা
গলিয়ে নীলাভ পূর্ণিমা চাঁদ 
ঢুকে
পড়েছিল ঘরে। আমার নির্ধারিত প্রেম 
সারারাত
ধরে...
তোমারই
সামনে আমাকে। আমি, সে এবং তুমি।
অপার
সৌন্দর্যে অকৃপণ সাঁতার।
স্বয়ং
ঈশ্বরও জেগে ছিলেন আমাদের সঙ্গে।
অতঃপর
ঈশ্বর চলে গেলেন সৃষ্টির আনন্দ নিয়ে। 
সবকিছু,
সব সংগীত, ভালোবাসা গীত প্রতিবিম্বিত থেকে গেল
তোমার
অগাধ বুকে। এরপর প্রগাঢ় মিলন। 
এরকম
সম্মিলন চলেছিল বারেবারে।
আয়না
করেছ তুমি আজ মেরু বদল।
তোমারই
উপকণ্ঠে দাঁড়িয়ে তোমাকে পাই না খুঁজে
তোমার
বিরুদ্ধাচরণ সহ্যের বাইরে এখন। 
বেলা-অবেলায় তোমার প্রতিবিম্বে জাগ্রত করো 
আমার
মুখের বীভৎস বলিরেখা। ত্বকের অমসৃণ খাঁজ
আনত
বুকের টোল খাওয়া ভাঁজ।
চুলের
কৃষ্ণ সাগরে উঁকি দেয় রূপালি তটরেখা।
তোমাকে
চাই না আর
সুপ্রিয়
আয়না আমার, বিদায় বন্ধু, বিদায়। 
তোমাকে
হারিয়ে আমার হয়নি কোনো ক্ষতি।
আজও
আমার প্রিয়তম ভালোবাসা
কুয়াশা
প্রাতে 
বেড
টি হাতে
প্রসারিত
করে অমোঘ নিয়ম।
সুকন্ঠে
বলে ওঠে, গুড মর্নিং অনিন্দ্যসুন্দরী।
আজ
থেকে সে-ই আমার
একমাত্র 
ব্যক্তিগত
আয়না। আমি তার চোখেই দেখে নেব
আমার
অমিয় জগৎ যখন-তখন।
 http://www.alokrekha.com



লেখনীর সূত্রপাত শুরু এখান থেকে 







কবি মেহরাব রহমান "আয়না ও সুন্দরী" নিজের অস্তিত্বের প্রতিবিম্ব।তিনি এখানে আয়নার মাধ্যমে নিজের সচেতনতা আত্মনির্ভরতাকে তুলে ধরেছেন।অত্যন্ত সুন্দর চমৎকার একটা কবিতা ।
ReplyDelete"ক্রমশ তুমি সরে যাচ্ছ দূরে। আমারই ছিলে অথচ আমারই বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছ ঘুরে এইকথা গুলর অবাধ্য আয়না, তুমি মানছ না কোনো নিয়ম-কানুন।" কবি মেহরাব রহমান "আয়না ও সুন্দরী" এখানেই কবিয়ার মুল উপাদ্য বিষয়।আয়নায় নিজের প্রতিফলন ঘটে ।কোন আড়াল ছাড়াই বাস্তব চিত্র ফুটে ওঠে । আর যখনই তার ব্যতিক্রম হয় , হয় অবাধ্য আয়না।দারুন লিখেছেন কবি।
ReplyDelete