এই  রণাঙ্গনে আমাকে  
একটুকু  ভালোবাসতে দিও 
মেহরাব রহমান 
ছুটির দিনের অলস সকাল
গোধূলি রোদ ঝরে পড়ে 
টুপটাপ... টুপটাপ...টুপটাপ....
আবিরের রঙে রাঙানো 
ঝুঁকেপড়া বিকেল 
নির্মেঘ ঝুল বারান্দা   
তোমার প্রিয়রঙ পিয়ালায় 
স্বর্ণাভ সোনালী চা  
গমগমে গানের গুঞ্জনা  
অঞ্জনা তোমাকে উষ্ণ রাখে... জানি আমি 
পান শেষে 
শেষ বিন্দু চুমুকের পর   
আমার করতলে তুলে দাও    
তোমার অলস বিশ্রামের সব ছায়াপথ 
জাদুকরী স্পর্শে 
আমি ঐসব ধূলিকণা
জীবনের ভুল বালুচর 
কারুকাজ চায়ের কাপ থেকে 
ক্রমশ: মুছে দেব  
মুছে দেব ফোঁটাফোঁটা এপিটাফ 
                                                                                                                                                                                       ক্লান্তি ঘাম
                                                                                                                     ক্ষোভ বিবর্ণ বেদনা
                                                                                                                             অবশ অন্ধকার 
তারপর :  
করোটির গহন গহীনে ঝড়ের পর 
মগজে মননে খেলবে 
আগ্নেয় প্রেম কণাকণা 
মৃত্তিকার সোঁদাগন্ধ মেখে  
বিত্তবান হবে অনন্যপ্রেম 
অন্যরকম ভালোলাগা 
তোমার মনলোকে দৌড়ঝাঁপ...  
শতেক আলোর ঝর্ণাধারা... 
আমাকে তুমি......
এই রণাঙ্গনে আমাকে 
একটুকু ভালোবাসতে দিও ওগো প্রিয় 
আমারও কতযে রুদ্র মুহূর্ত 
কতযে দুঃসময়   
হুট্ করে জ্বলে ওঠা  
পোড় খাওয়া কঠিন পাথর  
হিম জল বুকে নিয়ে 
বরফকুচি বৃষ্টি নামে  
এক ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে তুষার নগর 
এটাই আমার বসতবাড়ি 
ভিটেমাটিঘর ; আদর-নিবাস ;
ঐ দূর থেকে আকাশ নদীতে বৈঠা বেয়ে 
কত প্রেম অসমাপ্ত রেখে চলে আসা 
এ জগৎ বিকিকিনির হাট 
রুদ্রাক্ষের মালাবদল 
কতবার যন্ত্রণা-দঃখ 
নিজবাসভূম ফেলে আসা
নদীর ওপারে দেশ 
দেশের ওপারে দেশ  
                          
                                                                        হায়রে! জন্মভূমি ? 
আমাকে ছাড়াই 
কাকভোরে স্বদেশের ঘুম ভাঙে 
প্রাণের পতাকা উড়ে প্রাণের ভিতর 
আনন্দ-যন্ত্রণার হাহাকার  
দিনান্তে সূর্য ডুবে দূর পশ্চিমে  
এখনতো নির্বাসন  
পরদেশী আমি 
ইরেজারে মুছে যাওয়া খেরো খাতা
কবিতার ধূসর মলাট  
সময়ের ঐ প্রান্তে পড়ে আছে ঐসব
যুদ্ধের দামামা বাজে 
মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত দিনগুলো 
ভয়ঙ্কর ৭১ এর দিনরাত্রি  
আমিও ছিলাম সেবাদাস ; দেশমাতৃকার ;
দানবের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ালাম  
আমারই মতন আরো অনেকে
দীর্ঘ প্রতিক্ষা শেষে   
কর্কট সময়ের অবসান 
অবাক ভোরে দুয়ারে দাঁড়ালো আসি 
অধরা স্বাধীনতা 
আমরা সবাই আহত পাখি
ক্ষতবিক্ষত পথহারা 
ঘরের ছেলে ঘরে 
ফিরে দেখি 
স্বচ্ছ জলের নীচে অন্য এক পোতাশ্রয় 
তথাপি শেষ দুঃখ বৃষ্টির পর 
তিলোত্তমা ঢাকা নগর
বিউগলে জলপ্রপাতের সুর শুনি    
বিস্তীর্ণ প্রান্তরে বাজলো আনন্দ ভৈরবী 
সূর্যাস্তের পেছনে দূর উন্মুক্ত দিগন্ত 
এইতো আশার জাহাজ ভিড়লো বন্দরে  
আমরা কজনা নীলক্ষেত ধরে হাঁটছি
উপরে গাঢ় নীল আকাশ 
নীচে নীল নদ 
নীল জলে নীল পানসি ভাসে  
বাতাসে সবুজের গন্ধ 
তরুণ বাংলাদেশ 
আমার গলায় পরলাম মাটির গন্ধে মাখানো 
আলোকিত সম্ভাবনার একটি নেকলেস
গুনগুনিয়ে গাইলাম গান 
"একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতা সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার " 
হঠাৎ সেইসব জরাগ্রস্ত  শব্দাবলী আমাকে ঘিরে ধরে 
যা এখন প্রেতাত্মা 
কর্কট কালো যন্ত্রনা
পাথরচাপা কষ্ট...
                                                                                                                                                                                   
 আগরতলা 
                                                                                                                                  ইন্ডিয়ান আর্মি            
                                                                                                                                 সেনা গোয়েন্দা
                                                                                                                                     ইন্টেলিজেন্স           
                                                                                                                              প্রশিক্ষণ ক্যাম্প
                                                                                                                           ব্রিগেডিয়ার সেন 
ওখানেই যুদ্ধবিদ্যার গোপন সংবাদ  
সেনা গোয়েন্দাদের সঙ্গে 
হতাশার বিপরীতে ঘুরে দাঁড়ানো   
মুক্তির জন্যে সন্তর্পনে কাজ করা  
যুদ্ধ শেষ 
বিজয় নিশান উড়ছে আকাশে 
ঐযে ঐখানে যোদ্ধাদের ভিড় 
আমিও এক সারিবদ্ধ সহযাত্রী 
নেতারা লিখছে নাম মুক্তিযোদ্ধার 
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আমার নাম লিখতে 
ওরা অস্বীকার করলো 
আমি কোনো মুজিব বাহিনী নই
কোনো সেক্টরের নই  
তবে ??? 
আমারই  মাটিতে 
আমাকে ওরা গুপ্তচর সন্দেহ করেছে 
ওদের চোখে দেখেছি তীব্র ঘৃণা 
ওরা আমাকে 
সনদপত্র দিতে অস্বীকার করেছে
উন্মাদ কর্কশ কণ্ঠ:
'যাও ভারতীয় সেনার কাছ থেকে গিয়ে সার্টিফিকেট নাও'        
ওরা আমাকে কৃষ্ণগহবরে ছুড়ে ফেলেছে  
উহ! ব্ল্যাকহোল অন্ধকার...  
হাজার আলোকবর্ষ পেরিয়ে আবার আলোকরেখা...   
ওরা ঠিক বলেছে 
আমি যুদ্ধ করিনি 
আমি কোনো মুক্তিযোদ্ধা নই 
নথিপত্র সব ভস্ম করেছি চিতার 
আমি এখন এক দেশদ্রোহী
স্বার্থপর কাপুরুষ
পলাতক আসামি
আমি এখন এক দেশদ্রোহী
স্বার্থপর কাপুরুষ
পলাতক আসামি
আমার  আমিকে আমি  নির্বাসনে 
পাঠিয়েছি
পরদেশ পরবাসে
এক যুদ্ধের ইতিতো আর এক যুদ্ধের শুরু 
তবেকি আমরা এক জেলখানা থেকে 
আরও বৃহত্তর জেলখানায় অন্তরীণ ? 
তবেকি এই বাঙালি জন্ম বৃথা ?
অদৃশ্য কোনো কারিগর খেলছে রংতামাশা ? 
তবেকি এই যাপিত জীবন এক রণাঙ্গন ? 
আমিকি এক পরাজিত সৈনিক ? 
এইসব জলাতঙ্ক ভাবনা আমাকে 
বারেবারে নিক্ষেপ করে ব্ল্যাকহোল অন্ধকারে 
যা এখন নিত্য সঙ্গী 
তথাপি প্রায়শঃই জোছনা প্লাবন উপচে পড়ে 
সমুদ্দুরের গান শুনি 
আমার ভূবনে গীতাঞ্জলি
আমার স্বপ্নচারি জনম জনমের সাথী   
কত ঈষদুষ্ণ বসন্তে 
কতনা স্বপ্নকুঁড়ি দিয়ে গেঁথেছি
যাপিত জীবনের টুকরো টুকরো মালা  
রানী বিষন্ন মধ্যরাতে কতবার 
তোমার অরণ্যে অন্তহীন তান্ডব ঝড় তুলেছি 
তোমাকে নিয়ে ভেসেছি জলজ অবগাহনে 
বহতা নদীর মতন ততক্ষন.........................................................
                                                   যতক্ষণ..........................................................
মনেকি পড়ে আমাদের 
মধুচন্দ্রিমার ঐসব দিনরাত্রি 
দেবী আমি নতজানু বিনম্র  চিত্তে 
কতবার তোমার বেদিমূলে 
নৈবেদ্যের থালে 
কতনা পূজার অর্ঘ্য সাজিয়েছি 
দিনশেষে আলোর পিদিম রাঙানো ইতিকথা  
স্মৃতির দেরাজ খুলে দেখো বারবার 
এতো  প্রেম, এই বিমূর্ত 
উচ্ছাস কি বৃথা যেতে পারে? 
তুমি  দেখো 
হায় ! 
এখন  জরাগ্রস্থ  প্রবীণ  পৃথিবী 
                                                                                                                                                                                  সুনামি   ঝড় 
                                                                                                                           করোনা  ভাইরাস
                                                                                                                 মারণব্যাধি  ক্যান্সার 
                                                                                               উগ্রবাদী আইসিস অনাচার   
                                                                                কুয়াশাচ্ছন্ন ধোঁয়াটে অলীক ধর্ম 
নব্যশিল্পতন্ত্র 
; নিওলিবারেলিজমের 
সম্ভ্রান্ত প্রতিনিধি
ওঁৎপেতে আছে রক্তচোষা  বাদুড় 
তৃতীয় শক্তির দাবার অব্যর্থ  চাল 
 রক্তপাত খুন রাহাজানির নগ্ন দামামা বাজে 
আবারও যখন সেই কৃষ্ণ গহবর 
উহঃ সেই ব্ল্যাকহোল অন্ধকার 
আমি কুঁকড়ে যাই বিবরে লুকাই 
আমি মনোবৈকল্যে আক্রান্ত 
এক বিকলাঙ্গ শিশু 
আমার ক্রোধ তখন কাঠফাটা রোদ্দুর  
মধ্যগগনের সূর্যের গনগনে আগুন 
রুদ্র প্রকাশ 
রক্তাক্ত ভঙ্গিমা 
মাত্র কয়েকটা মূহুর্ত 
মানব ঘড়ির কাঁটা থেকে 
ঝরে পড়ে কতিপয় সেকেন্ড 
তুমি জানো আমি জানি    
কালবোশেখী ঝড়ের পর 
আবার আলোকরেখা
হে আমার প্রেমময় মূর্ত প্রতিমা 
আমাকে তুমি  দয়া করে 
বৈরী আবহাওয়ায় একা ফেলে যেওনা পরিত্যাগ করোনা আমাকে
এই রণাঙ্গনে একটুকু ভালোবাসতে দিও          জনম জনম ও আমার প্রিয় 
টরন্টো 
ফেব্রুয়ারী ৭, 2020 
http://www.alokrekha.com




লেখনীর সূত্রপাত শুরু এখান থেকে 


















এই রণাঙ্গনে আমাকে একটুকু ভালোবাসতে দিও। কবি মেহরাব রহমনের ভিন্ন ধর্মী কবিতা।কবি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের বর্ণনা করেছেন ছুটির দিনের অলস সকাল গোধূলি রোদ ,প্রিয়রঙ পিয়ালায় স্বর্ণাভ সোনালী চা। খুব ভালো লাগলো। শুভেচ্ছা কবিকে।
ReplyDeleteএই রণাঙ্গনে আমাকে একটুকু ভালোবাসতে দিও। কবি মেহরাব রহমনের লেখা পরে ভালো লাগলো। দারুন লিখেছে। অলংকরণগুলো অনবদ্য। তিনি বরাবরই ভালো লেখেন। ভালো থাকুন আর ভালো ভালো কবিতা উপহার পাই।
ReplyDeleteএই রণাঙ্গনে আমাকে একটুকু ভালোবাসতে দিও। কবি মেহরাব রহমনের লেখা কবির হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতির কি গভীর প্রকাশ।গহীন জগতে কখনো শান্ত যদি আবার কখনো জোয়ার ভাটায় আবার খরস্রোতা কবির অভিমানী চেতনার অভিব্যক্তি এই কবিতা। নিদারুন একটা কবিতা। অনেক শুভেচ্ছা কবি.
ReplyDeleteকবি মেহরাব রহমনের লেখা এই রণাঙ্গনে আমাকে একটুকু ভালোবাসতে দিও।অনিন্দ্য এক কবিতা। আমরা অপেক্ষায় থাকি কবি মেহরাব রহমানের কবিতার জন্য। মনটা ভরিয়ে দিল। দারুন অনুভূতি কবিতা বার বার পড়তে ইচ্ছে করে। ! আলোকরেখাকে ও কবি মেহরাবকে অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা ।
ReplyDeleteকবি মেহরাব রহমনের লেখা এই রণাঙ্গনে আমাকে একটুকু ভালোবাসতে দিও। এক দীর্ঘ কবিতা। জীবনের সব ক্ষেত্রের বিবরণ পাই এই কবিতায়। দীর্ঘ কবিতা পড়ে সাধারণত একঘেয়েমি লাগে। কিন্তু এই কবিতায় প্রতিটি স্তবক এক একটা কবিতা। খুব ভালো লাগলো। অনেক শুভ কামনা কবিবর।
ReplyDeleteনতুন ধাঁচের বিশ্ব মানের কবিতা কবি মেহরাব রহমনের লেখা এই রণাঙ্গনে আমাকে একটুকু ভালোবাসতে দিও। দীর্ঘ এক কবিতা। জীবনের সব রস এমন কি মুক্তি যুদ্ধ দেশ মাতৃকা অভিমান সব মিলিয়ে একটি উত্তীর্ন কবিতা। আসলেও এই কবিতায় প্রতিটি স্তবক এক একটা নতুন কবিতা। খুব ভালো লাগলো। অনেক অনেক ভালোবাসা কবি।
ReplyDeleteবেশ ভালো লাগল
ReplyDelete