মুখোশ
মেহরাব রহমান
সুতরাং
সাতরং আলোর ঝরনা
ঘাসের মখমল বিছানায়
শুয়ে শুয়ে রবির আদর খাওয়া
প্রেম উপভোগ
রোদ পোহানো
শিশির সকালে
ঘাসফড়িঙের সাথে দেখা
সকাল অভিবাদন জানিয়ে
হঠাৎ ঘাস ফড়িং
মিলালো ঘাসের শরীরে
শুয়ে শুয়ে রঙিন গেলাসে
স্বপ্ন জল পান করি
চিন্তার মাকড়সা নিপুণ জাল বোনে
মরা শামুকের ভেতর
এক অভিনব পরাবাস্তব
স্বপ্ন বাস্তবের টানাপোড়েন
যাপিত জীবন তবে কি ছলনা
ক্ষণিকের মায়াজাল
মায়াবতী মায়ার খেলা?
মুখোশ খুলছি
নকল লেবাস
ঠুলি পরা চোখের নেকাব
খিড়কির সব পথ
ভাঙচুর
পাড়ভাঙা শব্দের শব্দ শুনি
এভাবেই ভাঙতে ভাঙতে নির্মাণ
রাজবাড়ির প্রধান তোরণ
সব পথ খোলা আছে
মুখোশ খুলছি
নকল লেবাস
আসো না তুমি
সে ও আসবে জানি
এই তুমি এই সে
যে-কোনো তুমি
যে-কোনো আর
এই প্রাঙ্গণে কোলাহল আমন্ত্রণ
হোক তাহাদের উন্মুক্ত আনাগোনা
মুখোশ খুলছি
নকল লেবাস
চোখে চোখ রাখো
স্ফটিক স্বচ্ছ খোলা জানালায়
হৃদয় পাঠ করো
কত সাদা কালো যন্ত্রণা
জীবনের পাতায় পাতায়
কত আনন্দ উৎসব
আলনায় ঝুলানো রঙিন জামা
মুখোশ খুলছি
নকল লেবাস
ঠোঁটের জংধরা
শতাব্দীর পলেস্তরা সরিয়েছি
গঙ্গা
যমুনা
শীতলক্ষ্যা
ওষ্ঠদ্বয় নদীর পবিত্র জলে ধুয়েছি
আসো ঠোঁটে ঠোঁট রাখো
সভ্যতার প্রথম উপহার আগুন
চুম্বনে হৃদয় পান করো
মদমত্ত মাতাল ...
হও দিগ্বিদিকশূন্য উন্মাদ ...
মুখোশ খুলছি
নকল লেবাস
আলোর ঝরনায়
অবারিত প্রেম
আগুন চুম্বনে শব্দপাঠ
রঙিন গেলাসে পান
মায়াবতী মায়ার খেলা
এসেছি মায়ের জঠর ছিঁড়ে
এই নতুন পরাণ
জন্মের প্রথম শুভক্ষণ
পদ্মপাতায় নববর্ষার
ছিটেফোঁটা জলের নগ্ন শরীর
আমাকে যেতে হবে
মুখোশ খুলে
নকল লেবাস ফেলে
দেখেছি ঘাসফড়িং মিশে যায়
ঘাসের শরীরে
যদিবা মাটির শরীর
একবার শেষবার
আমিও কি মিলাবো মাটির শরীরে?
http://www.alokrekha.com
"মুখোশ" কবিতায় কবি মেহরাব রহমান দারুন অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেছেন । কবি বারবার “মুখোশ খুলছি / নকল লেবাস” বলে মানবজীবনের ছলনা, কৃত্রিমতা ও সামাজিক অভিনয়কে ভাঙার আহ্বান জানিয়েছেন। এটি আত্মসত্যে পৌঁছানোর এক দার্শনিক যাত্রা। প্রকৃতির সঙ্গে আত্মিক মিলন প্রশংসার দাবীদার । ঘাস, ঘাসফড়িং, শিশির, রবি— এসব চিত্র কবির অন্তর্জগতের সঙ্গে প্রকৃতির সংলাপ তৈরি করে। মানুষ ও প্রকৃতি এখানে আলাদা নয়। তারা একে অপরের শরীরে মিশে যায়। খুব ভাল লাগলো। শুভ কামনা কবি ।
ReplyDelete"মুখোশ" কবিতায় কবি মেহরাব রহমান যে দারুন অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেছেন তা পড়ে খুব ভাল লাগলো। স্বপ্ন ও বাস্তবের টানাপোড়েন-“স্বপ্ন বাস্তবের টানাপোড়েন যাপিত জীবন তবে কি ছলনা”— জীবনের অন্তর্গত দ্বন্দ্ব তুলে ধরেছে। স্বপ্নের সৌন্দর্য আর বাস্তবের কঠোরতা মিলে গড়ে তোলে কবির চিন্তার জাল। এখানেই কবির সার্থকতা । অনেক ভালবাসা কবি । ভাল থাকবেন ।
ReplyDelete"মুখোশ" কবিতা কবি মেহরাব রহমানের দারুন অনন্য। পড়ে খুব ভাল লাগলো। এখানে আত্মউন্মোচনের অভিযান ,মুখোশ খুলে সত্যসত্তাকে আবিষ্কার করা মানে নিজের ভেতরের নগ্ন, নির্ভেজাল মানুষটিকে দেখা। এটি একপ্রকার আধ্যাত্মিক পুনর্জন্মের প্রতীক।শুভ কামনা কবি ।
ReplyDeleteআলকরেখায় আসলে মনটা ভরে যায় । যেমন নয়নাভিরাম তেমনি এর লেখা অনন্য সাধারন । "মুখোশ" কবিতা কবি মেহরাব রহমানের দারুন অনন্য। পড়ে খুব ভাল লাগলো। এখানে ভালোবাসা ও চুম্বনের প্রতীকচিত্র তুলে ধরেছেন কবি।
ReplyDelete“ঠোঁটে ঠোঁট রাখো / সভ্যতার প্রথম উপহার আগুন”— ভালোবাসাকে কবি সৃষ্টিশক্তির রূপে দেখেছেন। চুম্বন এখানে শুধুই রোমান্টিক নয়, বরং অস্তিত্ব ও সত্তার সংযোগ। শেষে কবি বলেন, “এসেছি মায়ের জঠর ছিঁড়ে / এই নতুন পরাণ”— এখানে মুখোশ খোলা মানে নতুন জন্ম, পবিত্র পুনর্নির্মাণ। মৃত্যুও হয়ে ওঠে মিলনের আরেক রূপ। দারুন লেখা কবি । ভাল থাকুন আরও ভাল ভাল লেখা আমাদের উপহার দেবেন ।
"মুখোশ" কবিতা কবি মেহরাব রহমানের দারুন অনন্য। পড়ে খুব ভাল লাগলো। এখানে ঘাসফড়িং-এর প্রতীকী ভূমিকা।ঘাসফড়িং মিশে যায় ঘাসের শরীরে— এটি মৃত্যুর এক সুন্দর রূপক। জীবনের সব রঙ শেষে মিশে যায় মাটিতে, প্রকৃতির অবিচ্ছিন্ন চক্রে। কবিতার ভাষা ও গঠন অনবদ্য ।কবিতাটি মুক্তছন্দে লেখা, যেখানে পুনরুক্তি (“মুখোশ খুলছি / নকল লেবাস”) ছন্দের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত। চিত্রকল্প, প্রতীক ও দার্শনিক সুর কবিতাটিকে আধুনিক ও গভীর করেছে। শুভ কামনা নিরন্তর ।
ReplyDelete"মুখোশ" কবিতা কবি মেহরাব রহমানের দারুন অনন্য। পড়ে খুব ভাল লাগলো। “মুখোশ” কবিতাটি মানুষের কৃত্রিম জীবনের মুখোশ খুলে প্রকৃত, নির্মল সত্তায় ফিরে যাওয়ার এক আত্মদর্শনের যাত্রা। কবি প্রকৃতির প্রতীক, স্বপ্ন, ভালোবাসা ও মৃত্যুর মাধ্যমে জীবনের আসল অর্থ অন্বেষণ করেছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি বুঝতে পারেন—সব মুখোশ, লেবাস, ছলনা ছেড়ে মানুষকে মাটির শরীরেই মিশে যেতে হয়, যেখানে সমস্ত মায়া ও সত্য এক হয়ে যায়। অনেক অনেক শুভেচ্ছা ।
ReplyDelete