আলোকের এই ঝর্নাধারায় ধুইয়ে দাও -আপনাকে এই লুকিয়ে-রাখা ধুলার ঢাকা ধুইয়ে দাও-যে জন আমার মাঝে জড়িয়ে আছে ঘুমের জালে..আজ এই সকালে ধীরে ধীরে তার কপালে..এই অরুণ আলোর সোনার-কাঠি ছুঁইয়ে দাও..আমার পরান-বীণায় ঘুমিয়ে আছে অমৃতগান-তার নাইকো বাণী নাইকো ছন্দ নাইকো তান..তারে আনন্দের এই জাগরণী ছুঁইয়ে দাও মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস গাঁথা ( ৫ ) ~ alokrekha আলোক রেখা
1) অতি দ্রুত বুঝতে চেষ্টা করো না, কারণ তাতে অনেক ভুল থেকে যায় -এডওয়ার্ড হল । 2) অবসর জীবন এবং অলসতাময় জীবন দুটো পৃথক জিনিস – বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন । 3) অভাব অভিযোগ এমন একটি সমস্যা যা অন্যের কাছে না বলাই ভালো – পিথাগোরাস । 4) আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও , আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দেব- নেপোলিয়ন বোনাপার্ট । 5) আমরা জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহন করি না বলে আমাদের শিক্ষা পরিপূর্ণ হয় না – শিলার । 6) উপার্জনের চেয়ে বিতরণের মাঝেই বেশী সুখ নিহিত – ষ্টিনা। 7) একজন ঘুমন্ত ব্যাক্তি আরেকজন ঘুমন্ত ব্যাক্তি কে জাগ্রত করতে পারে না- শেখ সাদী । 8) একজন দরিদ্র লোক যত বেশী নিশ্চিত , একজন রাজা তত বেশী উদ্বিগ্ন – জন মেরিটন। 9) একজন মহান ব্যাক্তির মতত্ব বোঝা যায় ছোট ব্যাক্তিদের সাথে তার ব্যবহার দেখে – কার্লাইন । 10) একজন মহিলা সুন্দর হওয়ার চেয়ে চরিত্রবান হওয়া বেশী প্রয়োজন – লং ফেলো। 11) কাজকে ভালবাসলে কাজের মধ্যে আনন্দ পাওয়া যায় – আলফ্রেড মার্শা
  • Pages

    লেখনীর সূত্রপাত শুরু এখান থেকে

    মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস গাঁথা ( ৫ )





    ১৯৫৭ সালের জুলাই আওয়ামীলীগ ওয়ার্কিং কমিটির সভায় হোসেন সোহরাওয়ার্দী ও ভাসানী দলের বিরোধ ঘনীভূত হয়।শেখ মুজিবের নেতৃত্বে সোহরাওয়ার্দী দলের "তরুণতুর্কিরা"ভাসানী গ্রূপের পিটিয়ে ক'জন সদস্যকে আহত করে। এমতবস্থায় মাওলানা ভাসানী বৈঠক থেকে ওয়াক আউট করেন। ২৭ শে জুলাই পুরনো ঢাকার একটি সিনেমা হলে অধিবেশনে ডাকেন। মাওলানা ভাসানী পূর্ব-পাকিস্তান-ন্যাশনাল ও আওয়ামী পার্টি গঠন করেন। তাঁর দলে আওয়ামী মুসলিম লীগের টিকেটি নির্বাচিত ৩০ জন পরিষদ দস্য ছিলেন। আওয়ামী লীগের দ্বিধাবিভক্তির ফলে কৃষক শ্রমিক পার্টি আবার চাঙ্গা হয়ে ওঠে।কেন্দ্রে ইসকান্দার মীর্জার নতুনচালে ১৯৫৭ সালের ১০ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রিসভার পতন ঘটে।১৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন মুসলিম লীগের আই আই চুন্দ্রীগড়। ১৬ ডিসেম্বর চুন্দ্রী - গড়ের বরখাস্ত করে রিপাবলিকান পার্টির ফিরোজ খান নুনকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। ফিরোজ খান নুন ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র অনুযায়ী ১৯৫৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। 


    পূর্ব-পাকিস্তান কেএসপি প্রাদেশিক পরিষদে শক্তির ভারসাম্য ফিরে পেয়ে আতাউর রহমান খানের প্রাদেশিক সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার চেষ্টা চালায়। আতাউর রহমান খান গভর্নরকে পরিষদের অধিবেশন মুলতবি করার পরামর্শ দেন। কিন্তু আবু হোসেন সরকার নিজে দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা দাবি করে সরকার গঠনের যৌক্তিতকতা তুলে ধরেন। ১৯৫৮ সালের ৩১ শে মার্চ গভর্নর ফজলুল হক আওয়ামী লীগের আতাইর রহমান মন্ত্রিসভাকে পদচ্যুত করেন। একই তারিখে আবু হোসেন সরকারকে গভর্নর হাউজে শপথ পাঠ করানোর পরপরই প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মীর্জা ফজলুল হককে বরখাস্ত করেন। মাত্র বারো ঘন্টার ব্যবধানে আবূ হোসেন সরকারের মন্ত্রিসভাকেও বরখাস্ত করা হয়। আতাউর রহমান খান আবার মন্ত্রিসভা গঠন করেন।



    বস্তুত যুক্তফ্রন্টের এই দুই শরিকের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতি এ সময় বেহাল অবস্থায় দাঁড়ায়। ১৯৫৮ সালের ১৩ জুন প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনে সংখ্যালঘু ও ‘ন্যাপ’ দলীয় সদস্যরা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। কিন্তু ১৮ জুনের অধিবেশনে ন্যাপ সদস্যগণ ভোটদানে বিরত থাকেন। ফলে আওয়ামী লীগের সরকার ১২ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়। ২০ জুন আবু হোসেন সরকার যখন আবার মুখ্যমন্ত্রীরূপে শপথ নিচ্ছেন, তখন খবর রটে যায় যে, ন্যাপ সদস্যরা পুনরায় আওয়ামী লীগেকে সমর্থন জানিয়েছে।তিন দিন পর ২৩ জুন পরিষদের পরিষদের অধিবেশনে বসে। আওয়ামী লীগ অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করে। ন্যাপ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। ১৪ ভোটের ব্যবধানে তিন দিনের মাথায় আবু হোসেন সরকারের মন্ত্রিসভার আবার পতন ঘটে।


    এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট শাসনতন্ত্রের ১৯৩ ধারা প্রয়োগ করে পূর্ব-পাকিস্তানে গভর্নরের শাসন জারি করেন। গভর্নরকে তিনি সকল দলের পরিষদ সদস্যদের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তখনকার পরিস্থিতির চিত্র পাওয়া যায় মেজর (অব) এস জি জিলানীর বিবরণীতে।তিনি পূর্ব-পাকিস্তানের ১৫ জন গভর্নরের এডিসি হিসেবে দীর্ঘ দিন গভর্নর হাইসে দায়িত্ব পালন করেছেন।
    কেন্দ্রীয় সরকার দুমাস পর ১৯৫৮ সালের ২৫ আগস্ট আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা পুনর্বহাল করার আদেশ দেন।২০ সেপ্টেম্বর প্রাদেশিক পরিষদ বসে ।সেদিনই পরিষদের কেএসপি সমর্থক স্পিকার আবদুল হাকিমের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ অনাস্থা প্রস্তাব আনে। পরিষদে হৈ চৈ-হাঙ্গামা বেঁধে যায়। দুই দলের পরিষদ সদস্যগণ যক্তির পরিবর্তে হাতাহাতিতে লিপ্ত হয়। এ অবস্থায় ২০ সেপ্টেম্বর অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়। ২৫ সেপ্টেম্বর স্পিকার আবদুল হাকিমের অনুপস্থিতিতে ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। দুই দলের বিবাদমান সদস্যগণ প্রথমে হাতাহাতি, ঘুষাঘুষি করতে শুরু করেন।এই ঘটনার এক পর্যায়ে ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলী চেয়ারের আঘাতে মারাত্মকভাবে যখন হন। দু’দিন পর হাসপাতালে জনাব শাহেদ আলীর মৃত্যু হয়। বস্তুত ১৯৫৮ সালের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পূর্ব-পাকিস্তানের রাজনীতির ইতহিাস এক কালিমালিপ্ত অধ্যায় সৃষ্টি হয়।রাজনীতিকদের চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও কাণ্ডজ্ঞানহীন উচ্ছিংখল আচরণ দেশকে সামরিক শাসনের দিকে ঠেলে নিয়ে যায়।




    পূর্ব-পাকিস্তানের রাজনীতিতে এই অবস্থা যখন চলছে, কেন্দ্রে রিপাবলিকান পার্টি ও আওয়ামী লীগের কোয়ালিশন মন্ত্রিসভার অবস্থাও তখন সংকটাপন্ন। রিপাবলিকান পার্টির সাথে মতপার্তক্যের কারণে সোহরাওয়ার্দী কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে তাঁর দলের ছয়জন সদস্যকে প্রত্যাহার করেন। মুসলিম লীগের সাথেও রিপাবলিকান পার্টির তীব্র বিরোধ চলছিল। ওয়ান ইউনিট প্রশ্নে ফিরোজ নুনর নিজ দলের অভ্যন্তরেও মতবিরোধ প্রবল হয়ে উঠেছিল।
    কেন্দ্র ও প্রদেশের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক এই সংকটজনক পরিস্থতির অজুহাতে প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মীর্জা ১৯৫৮ সালে ৭ অক্টোবর পাকিস্তান মার্শাল ল’ জারি করে সেনাবাহিনী প্রধান আইয়ুব খানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করেন। প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মীর্জা ২৪ অক্টোবর একটি মন্ত্রিসভা গঠন করেন। উভয় প্রদেশ থেকে চারজন করে আটজন অরাজনৈতিক বেসামরিক ব্যক্তি এবং চারজন জেনারেল সমেত বারো সদস্যের এই মন্ত্রিসভায় জেনারেল আইয়ুবকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়। অক্টোবর মাস শেষ হওয়ার আগেই আইয়ুব খান ইস্কান্দার মীর্জার কাছ থেকে সমস্ত ক্ষমতা দখল করেন। ২৮ অক্টোবর তিনজন জেনারেল পিস্তল উঁচিয়ে পাকিস্তান রাজনীতিতে ‘মুর্শিদাবাদের দুষ্টগ্রহ’ ইস্কান্দার মীর্জার কাছ থেকে প্রেসিডেন্ট পদে ইস্তফাপত্র আদায় করেন। এরপর তাঁকে প্রথমে কোয়েটা ও পরে লন্ডন পাঠিয়ে দেওয়া হয়।



    ১৯৫৮ সালের মার্শাল ল’-এর প্রধান কুকীর্তি ছিল দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পাওয়া ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র বাতিল ঘোষণা। আইয়ুব খানের দ্বিতীয় কুকীর্তি মৌলিক গণতন্ত্র বা বুনিয়াদী গণতন্ত্র। ১৯৬০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মৌলিক গণতন্ত্রীদের আস্থা ভোটে আইয়ুব খান সামরিক খোলস ভেদ করে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টরূপে আত্মপ্রকাশ করেন। আইয়ুব খান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনজুর কাদিরের নেতৃত্বে একটি শাসনতন্ত্র কমিশন গঠন করেন। এই কমিশন আইয়ুব খানের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার লক্ষ্যে পূর্ণ গণতন্ত্রের পরিবর্তে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র বা তথাকথিত মৌলিক গণতন্ত্রের সুপারিশ করেন। কমিশনের রিপোর্ট পর্যালোচনার জন্য ১৯৬১ সালের ২৪ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত গভর্নরদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব-পাকিস্তানের গভর্নর আজম খান শাসনতন্ত্রের সুপারিশ-এর ব্যপারে তাঁর মন্ত্যব্যে ‘জনগণের ওপর আস্থা রাখা’ এবং ‘জনগণের রায়কে চূড়ান্ত বলে গণ্য করার’ পক্ষে কথা বলার কারণে আইয়ুব খানের বিরাগভাজন হন। এখানে উল্লেখ্য শেখ মুজিব হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করার মাধ্যমে শেখ মুজিব ১৯৬১ সালে জেল থেকে ছাড়া পান। এবার শুরু করেন গুপ্ত রাজনৈতিক তৎপরতা। অন্যান্য সাধারণ ছাত্রনেতাদের নিয়ে গোপনে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন যার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করা।১৯৬২ সালের ৬ ফেব্রয়ারি জননিরাপত্তা আইনে তাকে আবার আটক করা হয়েছিল।


    জুনের ২ তারিখে চার বছরব্যাপী মার্শাল ল অপসারণের পর একই মাসের ১৮ তারিখে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। ২৫ জুন অন্য রাজনৈতিক নেতাদের সাথে মিলে আইয়ুব খান আরোপিত বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুর বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেমে পড়েন। ৫ জুন পল্টন ময়দানে আয়োজিত এক সম্মেলনে আইয়ুব খানের সমালোচনা করেন। ২৪ সেপ্টেম্বর লাহোর যান এবং সেখানে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে মিলে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গড়ে তোলেন। এটি মূলত বিরোধী দলসমূহের একটি সাধারণ কাঠামো হিসেবে কাজ করেছিল। পুরো অক্টোবর মাস জুড়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে মিলে বাংলার বিভিন্ন স্থান সফর করেন এই যুক্তফ্রন্টের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে।১৯৬৩ সালের ৩ জানুয়ারি করাচীতে সোহরাওয়ার্দীকে গ্রেফতার করা হয়।ঐ বছরের ৫ ডিসেম্বর তিনি বৈরুতে মৃত্যুবরণ করেন।

    প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যেকার অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরী -করণে তিনি পদক্ষেপ নেন। কিন্তু তার এই পদক্ষেপ ব্যাপক রাজনৈতিক বিরোধিতার জন্ম দেয়।পূর্ব পাকিস্তানের মত পশ্চিম পাকিস্তানেও এক ইউনিট ধারণা প্রচলনের তার চেষ্টা পশ্চিম পাকিস্তানী রাজনীতিবিদদের কারণে নস্যাৎ হয়ে যায়।১৯৫৮ সালে ইস্কান্দার মীর্জা পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারী করেন। আগস্ট,১৯৫৯ হতে ইলেক্টিভ বডি ডিসকুয়ালিফিকেশান অর্ডার অনুসারে তাকে পাকিস্তানের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। পাকিস্তান নিরাপত্তা আইনে রাস্ট্রবিরোধী কাজের অপরাধ দেখিয়ে তাকে জানুয়ারি ৩০, ১৯৬২ তে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং করাচি সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ করা হয়।এ ব্যাপারেও পূর্ব-পাকিস্তানের গভর্নর-এর মতামত নেওয়া হয়নি। কিন্তু এই গ্রেফতারীর বিরুদ্ধে পূর্ব-পাকিস্তানের তীব্র প্রতিক্রিয়ার দায়-দায়িত্ব আজম খানের ওপরই চাপানো হয়। এ অবস্থায় আজম খান পূর্ব-পাকিস্তানের গভর্নর ইস্তফা দেন।আগস্ট ১৯, ১৯৬২ সালে তিনি মুক্তি পান। অক্টোবার,১৯৬২তে তিনি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের উদ্দেশ্যে ন্যাশনাল ডেমো- ক্রাটিক ফ্রন্ট (এন ডি এফ ) গঠন করেন।স্বাস্থ্যগত কারণে ১৯৬৩ সালে দেশের বাইরে যান এবং লেবাননের রাজধানী বৈরুতে অবস্থানকালে ডিসেম্বর, ১৯৬৩ তে তিনি মারা যান। সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি মুজিবের বাসায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আওয়ামী লীগকে পুণরায় সংহত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই বৈঠকের প্রস্তাবের ভিত্তিতে শেখ মুজিব তত্কালীন পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের মহাসচিব ও মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই না যে, ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ৯ জুলাই তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনের শেষে দলের সেক্রেটারী জেনারেল (মহাসচিব) নির্বাচিত হন। একই বছরের ১৪ নভেম্বর সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অন্যান্য দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়এই নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২৩৭ টি আসনের মধ্যে ২২৩ টিতে বিপুল ব্যবধানে বিজয় অর্জন করে যার মধ্যে ১৪৩ টি আসনই আওয়ামী লীগ লাভ করেছিল। শেখ মুজিব গোপালগঞ্জে আসনে ১৩,০০০ ভোটের ব্যবধানে বিজয় লাভ করেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল শক্তিশালী মুসলিমলীগ নেতা ওয়াহিদুজ্জামান। ১৫ মে কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২৯মে কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট ভেঙে দেয়। ৩০মে করাচি থেকে ঢাকা ফেরার পর বিমান বন্দর থেকেই তাকে আটক করা হয়। ২৩ ডিসেম্বর মুক্তি লাভ করেন। ১৯৫৫ সালের ৫ জুন শেখ মুজিব আইন পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। ১৭ জুন আওয়ামী লীগ পল্টন ময়দানে আয়োজিত এক সম্মেলনে ২১ দফা দাবী পেশ করে যার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২৩ জুন দলের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন অর্জিত না হলে আইন সভার সকল সদস্য পদত্যাগ করবেন। 



    ২৫ আগস্ট পাকিস্তানের করাচিতে গণপরিষদের অধিবেশনে শেখ মুজিব বলেন:"Sir [President of the Constituent Assembly], you will see that they want to place the word "East Pakistan" instead of "East Bengal." We had demanded so many times that you should use Bengal instead of Pakistan. The word "Bengal" has a history, has a tradition of its own. You can change it only after the people have been consulted. So far as the question of one unit is concerned it can come in the constitution. Why do you want it to be taken up just now? What about the state language, Bengali? We will be prepared to consider one-unit with all these things. So I appeal to my friends on that side to allow the people to give their verdict in any way, in the form of referendum or in the form of plebiscite."

    ১১মার্চ একটি সর্বদলীয় সংগ্রমা পরিষদ গঠিত হয় যার মাধ্যমে মুজিব সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধ-কল্পে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সেনাশাসক আইয়ুব খানের বেসিক ডেমোক্রেসিস প্ল্যান, সামরিক শাসন ও এক-ইউনিট পদ্ধতির বিরোধী নেতাদের মধ্যে অগ্রগামী ছিলেন শেখ মুজিব। এই পদ্ধতি অনুযায়ী ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার পরিকল্পনা করা হয় ও প্রদেশগুলোকে একত্রে জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কাজ করতে মুজিব আইয়ুব বিরোধী দল প্রার্থী ফাতিমা জিন্নাহকে সমর্থন করেন। যথারীতি নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পূর্বে তাকে আটক করা হয়। তাকে রাষ্ট্রদ্রোহীতা এবং আপত্তিকর প্রস্তাব পেশের অভিযোগে অভিযুক্ত করে এক বছরের কারদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।অবশ্য উচ্চ আদালতের এক রায়ে তার আগেই তিনি মুক্তি পেয়ে যান। এ সময় সামরিক বাহিনীর গণহত্যা আর বাঙালিদের চাহিদা পূরণে সামরিক শাসকদের ঔদাসীন্য পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।                                                            
    চলবে----------------------------------------------

    সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত http://www.alokrekha.com

    2 comments:

    1. আমিত ব্সুMay 31, 2017 at 3:39 PM

      জয় বাংলার যুদ্ধের সময় আমরা দেখেছি ওদের কষ্ট্ ! আমারা যার যা সাধ্যমত সাহায্য করার চেষ্টা করেছি! আমরা বাঙালী এক সব! শুধু সীমান্ত আলাদা! জয় হোক বাঙালীর '!

      ReplyDelete
    2. মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস গাঁথা লেখা পরে অনেক কিছু জানতে পারলাম। অনেক ধন্যবাদ সানজিদা রুমি।

      ReplyDelete

    অনেক অনেক ধন্যবাদ