বন্ধন
সানজিদা রুমি
আমি যেন এক ফলভরা কানন,
সহস্র শ্রমে গড়ে তোলা জীবন-বাগান।
শাখা-প্রশাখায় ছড়িয়ে দিয়েছি স্নেহ ও প্রেম—
দিনরাত ভরে উঠি নিঃশব্দ নিবেদনে।
পাখিরা আসে, গান গায়, বাসা বাঁধে,
শুক-সারির মৃদু ছোঁয়ায় কাঁপে পত্র-পল্লব।
ক্লান্ত পথিক আমার ছায়ায় খুঁজে পায় প্রশান্তি,
নির্ভার হয়ে আমার কোলে হারায় ঘুমের দেশে।
আমার শিকড় আজ গভীর থেকে গভীরতর,
বাঁধন আমার শক্ত, স্থির, অপরিবর্তনীয়।
কিন্তু আমারও তো ছিল এক সহজ স্বপ্ন—
সাদা মেঘের ভেলায় ভেসে বেড়াবো আনন্দের উল্লাসে,
রাখালের বাঁশির সুরে হারিয়ে যাব দূর বহুদূর,
সীমাহীন আকাশের কোলে, মুক্তির সন্ধানে।
হায়! আজ সেই স্বপ্ন কেবল স্মৃতি,
চলার শক্তি কেড়ে নিয়েছে সংসার নামক জমিন।
এখানে আমি সাজিয়েছি সবুজের অভয়ারণ্য,
নিজ রসে স্নান করিয়ে করেছি ডাল-পালা সতেজ,
ফুলের সুবাসে ভরেছে ঘরকন্নার আঙিনা।
পাখির কূজনে দুলে ওঠে আমার প্রাণ,
নানা রঙের ফুল ফোটে, ছড়িয়ে দেয় ভালোবাসা।
মুগ্ধ নয়নে চেয়ে দেখি—
কি নিখাদ মায়া গড়ে উঠেছে বুকের গভীরে।
এই যে কানন, এই যে মমতার মাটি,
এতেই বাঁধা পড়েছি হৃদয়ের বন্ধনে।
এখন আর কোথায় যাবো? কিসের পিছু ধাবিত হবো?
চারদিকে দায়িত্বের অজস্র শাখা
ডেকে ফেরে, টেনে ধরে।
জীবন আবদ্ধ—মায়ার অদৃশ্য বন্ধনে।
সানজিদা রুমির কবিতা "বন্ধন" প্রকৃতি ও জীবনের মিশ্র রূপক – কবিতায় নিজের জীবনকে একটি ফলভরা কাননের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যা পাঠককে একদিকে প্রাচুর্য ও পরিপূর্ণতার অনুভূতি দেয়, অন্যদিকে দায়িত্ব ও আবদ্ধতার বাস্তবতা মনে করিয়ে দেয়। খুব ভাল লাগলো ।শুভ কামনা নিরন্তর ।
ReplyDeleteসানজিদা রুমির কবিতা "বন্ধন" একজন নারীর জীবনের প্রতিফলন ।এখানে কবি নিজেকে সংসার জীবনের সাথে যেভাবে উপমা ও শব্দের মালায় গ্রথিত করেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। খুব ভাল লেগেছে কবিতাটা পড়ে ।কবির কল্যান কামনা করি । ভাল থাকবেন ।
ReplyDeleteসানজিদা রুমির কবিতা "বন্ধন" একজন নারীর জীবনের প্রতিফলন ।এখানে কবি নিজেকে তুলে ধরেছেন এক ফলবান বৃক্ষের সাথে । দায়িত্ব ও স্বাধীনতার দ্বন্দ্ব – কবিতার কেন্দ্রীয় সুর হলো দায়িত্বের শিকড়ে বাঁধা পড়ে থাকা এক সত্তার অন্তর্দ্বন্দ্ব, যার মনে এখনো মুক্ত আকাশে ভেসে বেড়ানোর বাসনা রয়ে গেছে। অনন্য কবিতা ।
ReplyDeleteসানজিদা রুমির "বন্ধন" অনন্য কবিতা । এই যে কানন, এই যে মমতার মাটি,
ReplyDeleteএতেই বাঁধা পড়েছি হৃদয়ের বন্ধনে।এখন আর কোথায় যাবো? কিসের পিছু ধাবিত হবো?চারদিকে দায়িত্বের অজস্র শাখা ডেকে ফেরে, টেনে ধরে। জীবন আবদ্ধ—মায়ার অদৃশ্য বন্ধনে। এ যেন আমার জীবনের কথা ।সানজিদা রুমির লেখায় এক ধরনের জীবনবোধ থাকে তা একখানি আরশি। খুব সুন্দর লেখা ।যতই প্রশংসা করি তা যেন যথেষ্ট নয় । শুভেচ্ছা কবি ।
সানজিদা রুমির "বন্ধন" অনন্য কবিতা । এই কবিতায় চিত্রকল্পের সমৃদ্ধ ব্যবহার – পাখির গান, মেঘের ভেলা, রাখালের বাঁশি, ফুলের সুবাস—এসব চিত্রকল্প পাঠককে দৃশ্যমান ও অনুভূতিপূর্ণ পরিবেশে নিয়ে যায়, যা কবিতার আবেগকে তীব্র করে। এখানেই সানজিদা রুরির কবিতা লেখনের মন্সিয়ানা। ওনার লেখা আমার খুব প্রিয় । সহজ শব্দে বাস্তবতাকে তুলে ধরায় তিনি পটু । দুর্বোধ্য কবিতা কি কবিতার গুনে উত্তীর্ণ হয় ? যারা কবিতা লেখেন তারা এই কথাটা মনে রাখবেন । অন্তরের শুভেচ্ছা কবি সানজিদা রুমিকে ।
ReplyDeleteসানজিদা রুমির "বন্ধন" অনবদ্য একখানি কবিতা । এই কবিতা নিঃশব্দ নিবেদনের প্রতীক – "দিনরাত ভরে উঠি নিঃশব্দ নিবেদনে" পঙক্তিটি বিশেষভাবে তুলে ধরে, কীভাবে স্নেহ ও ভালোবাসা নিঃস্বার্থভাবে বিলিয়ে দিয়েও অনেক স্বপ্ন ব্যক্তিগত জীবনে অপূর্ণ থেকে যায়। মায়ার অদৃশ্য বন্ধন – শেষাংশে ‘মায়ার অদৃশ্য বন্ধন’ জীবনের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক, দায়িত্ব ও আবেগের এমন এক রূপক, যা মুক্তি দিলেও টেনে ধরে রাখে। অপূর্ব অভিব্যক্তি । অনেক অনেক শুভ কামনা ।
ReplyDeleteসানজিদা রুমির "বন্ধন" অনবদ্য একখানি কবিতা । এই কবিতায় জীবনের অপূর্ব অভিব্যক্তি ব্যক্ত হয়েছে যা আমাদের আকর্ষিত করে। কবিতাটি কোমল বিষাদ ও আত্মত্যাগের সুরে ভরপুর, যেখানে তৃপ্তি ও বেদনা পাশাপাশি অবস্থান করছে, ফলে পাঠকের মনে এক ধরনের গভীর আবেগের প্রতিধ্বনি সৃষ্টি হয়। অনেক অনেক শুভ কামনা ।
ReplyDelete