হিমাঙ্কের নিচে
মেহরাব রহমান
উত্তর আমেরিকার জনপদ ধরে
পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটে চলেছে
বাঙালি এক কবি।
সকল বৈপরীত্যের বিরুদ্ধে কবির বিরুদ্ধাচারিতা।
শীতার্ত টরন্টো শহর, দুরন্ত শীতে জমে যাচ্ছে সব ; কাঁপছে
প্রবল। যেনবা টাইফুনে পড়া ভয়ার্ত মানুষ। তাপমাত্রা
ক্রমশ নামতে নামতে হিমাঙ্কের নিচে।
এই হিমরাতে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে
গাছের জীবন্ত কঙ্কাল। একী বিস্ময়
তবুও সবুজ পাতার সংসার নিয়ে সদর্পে
জেগে আছে রাশি রাশি ক্রিসমাস ট্রি। ধীরে ধীরে
জমে যাচ্ছে কঙ্কাল বৃক্ষদল,
সুউচ্চ দালান, শহরের মাথার ওপর ছাতার
মতন প্রকাণ্ড আকাশ।
হিম থেকে হিম হয়ে জমে যাচ্ছে
থেমে যাচ্ছে চলমান টরেন্টো শহর।
তাপমাত্রা দ্রুত নামছে, বিয়োগ
সেলসিয়াস ৩০ থেকে বিয়োগ সেলসিয়াস ৪০, এরপর
৫০-এর কোঠায়। জমে গেছে
ভালোবাসা, উষ্ণ মিলনের তীব্র আশা, জমে গেছে
যুবতী পূর্ণীমার রূপসী চাঁদ, জমে গেছে
ক্রোধ, হিংসা, প্রতিশোধ
যুদ্ধ এবং শান্তি।
কেবল জেগে থাকা ক্ষুধা ও তৃষ্ণা নিয়ে এই মহামারি শীতে এক
বাঙালি কবি ছুটে চলে, উডবাইন, মেইন স্ট্রিট এরপর
ভিক্টোরিয়া ড্যানফোর্থের বাঙালিপাড়ায়। তন্দুরের গনগনে অবাধ্য আগুন
দিগন্তে ছড়ায় শেষ-সূর্যের রক্তিম রং। সদ্য-সেঁকা তন্দুর রুটির সাথে
ঝলসানো মাংসের স্বাদ কবির ভেতর
একটু আগের অনুভূতিগুলো আস্তে আস্তে গলাতে গলাতে
অফুরান জোয়ার।
নমস্য সূর্যের কাছে কবির বিনম্র প্রার্থনা
মধ্যগগনে তুমি জেগে ওঠো,
তাপশক্তি সঞ্চারিত হোক দিকে দিকে ;
গলে যাক হিম শীতে জমে-যাওয়া সবকিছু।
কেবল হিমাঙ্কের নিচে যুগ-যুগান্তর থেকে যাক হিংসা, প্রতিশোধ
ক্রোধ এবং যুদ্ধ।
http://www.alokrekha.com
"নমস্য সূর্যের কাছে কবির বিনম্র প্রার্থনা...
ReplyDeleteগলে যাক হিম শীতে জমে-যাওয়া সবকিছু।
কেবল হিমাঙ্কের নিচে যুগ-যুগান্তর থেকে যাক হিংসা,
প্রতিশোধ, ক্রোধ এবং যুদ্ধ। " ---অসাধারন এই অভিব্যক্তি! হিমাঙ্কের নীচে যদি সব হিংসা, প্রতিশোধ, ক্রোধকে জমিয়ে দেয়া যেত তাহলে এই উর্বরা ফাগুণ হয়তো আরও সবুজ আরও পুস্পিত হয়ে যেত। নাগরিক সভ্যতায় মানুষ আজ ভান করা এক সুখে মাতাল। পাহাড়ের উচ্চতায়, বৃক্ষের মৌনতায়, মৃত্তিকার সহনশীলতায়, সাগরের বিশালতায় এই মানুষ আর কিছু শেখেনা। পাহাড় থেকে অনেক নীচে, খুব নীচে, অন্ধকারে আমি এবং আমরা- কুলীণ সব মানুষ! ধন্যবাদ কবি মেহরাব রহমান বিষয়ের গভীরে এভাবে নিয়ে যাওয়ার জন্য!
সুপ্রিয় ঋতু মীর আপনার ভালোলাগা
ReplyDeleteআমার উৎসাহ