প্রসঙ্গ – “হে মহাজীবন“
ঋতু মীর
‘Books are mirrors, you only see in them what you already have inside you’
--Carlos Ruis Zafon
পাঠকের
অনুভূতি এবং উপলব্ধির প্রকাশ লেখকের এক বিশাল অনুপ্রেরনা।একটা মানসম্পন্ন ভাল লেখা বা কবিতার নান্দনিক প্রকাশে
পাঠকের সুচিন্তিত মন্তব্য একজন লেখক বা কবির জন্য প্রাপ্য স্বীকৃতিও বটে! গত নভেম্বর ২১ তারিখ আলোকরেখায় “হে মহাজীবন!এক অনুপম জীবনালেখ্য “শিরোনামে লেখক আকবর হোসেনের “হে মহাজীবন “বইটির পর্যালোচনা প্রকাশ এবং পাঠকের
মন্তব্য আমাকে নিঃসন্দেহে অনুপ্রাণিত এবং সন্মানিত করেছে।আমি এক বিমুগ্ধ পাঠক মাত্র!“হে মহাজীবন“ জীবন দর্শনের
কিছু অমোঘ সত্য উচ্চারিত করে আমার উপলব্ধির বোধকে সমৃদ্ধ করেছে বলেই লেখালেখিতে আমার
অনিয়মিত কলম অক্ষর আর শব্দে ভাষা খুঁজে পেয়েছে। আমি অনুপ্রাণিত এই ভেবে যে, এক স্বতঃস্ফূর্ত উৎসাহে পাঠক বইটি হাতে তুলে নেবে! বইটির রিভিউ লেখায় আমার সার্থকতার মাত্রাও বোধহয়
সেখানেই!
১।
কবি
মেহরাব রহমান “হে মহাজীবন “এর রিভিউ প্রসঙ্গে তাঁর সুচিন্তিত মুল্যবান মন্তব্যের
মাঝে যে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন তার উত্তরে বিনয়ের সাথেই বলতে চাই- কোন বইয়ের পর্যালোচনা সম্পূর্ণই পাঠকের ব্যাক্তিক
অভিমত এবং অনুভুতির গভীরতম প্রকাশ। আমার মতে- যে কোন কিছুর পর্যালোচনা নির্ভর করে ব্যাক্তির নিজস্ব চিন্তা, perception বা প্রত্যক্ষন এর উপর । অর্থাৎ ব্যাক্তির নিজস্ব দেখার
চোখ বা অনুভব দিয়েই তাঁর বিশ্লেষণ প্রভাবিত হয়। সেখানে অন্য মতামতের ভিন্নতা
থাকতেই পারে।লেখক আকবর হোসেনের “হে মহাজীবন“ বইটি প্রসঙ্গে
আমি আরও অনেক সমৃদ্ধ পর্যালোচনা পড়েছি যার সাথে আমার দৃষ্টিভঙ্গী বা বিশ্লেষণের পার্থক্য
রয়েছে।রিভিউ তত্ত্ব বা থিউরির মত universal truth নয় যে তাকে সর্বস্বীকৃত , সার্বজনীন হতেই হবে। লেখক আকবর হোসেনের ভাষায়- “শব্দাবলী কাব্য
নয়, শব্দের মাঝখানে যে নীরবতা, সেটা কাব্য। কবিতার মর্ম শব্দাবলীতে
নয়, শব্দের পেছনে যে নিগুঢ় নীরবতা, সেখানেই।" কবি মেহরাব রহমানের মন্তব্যে- শব্দাবলীই কাব্য।
একথা অনস্বীকার্য যে, শব্দ অবশ্যই ভাষা শৈলীতে সমৃদ্ধ হয়ে একটা কবিতা বা লেখাকে
নান্দনিক করে তোলে। তবে এক্ষেত্রে আমার অভিমত- সব শব্দই কাব্য হতে পারেনা। যেমন- বাঙলা ভাষায় অনেক লেখক/কবি বানিজ্যিক প্রবণতা বা
সস্তা জনপ্রিয়তার খাতিরে শব্দ বা ভাষার অপব্যাবহার করেন । যেমন, বই, নাটক বা বিজ্ঞাপন সংলাপে- দিও বা দিও না কে দিবা/দিবানা, কর বা করবেনা কে করবা / করবানা, যাবে, যাবে না কে যাবা/ যাবানা ইত্যাদির মত আরও অনেক বাঙলা শব্দ অবলীলায় ব্যবহৃত
হচ্ছে। এই সব শব্দের ব্যবহারে কোন লেখা বা সংলাপ যে কাব্য হতে পারেনা কবি মেহরাব রহমান
নিচ্ছয়ই তা স্বীকার করবেন।
২।
প্রসঙ্গক্রমে- আকবর হোসেন তাঁর বইয়ে কবি এবং কবিতা প্রসঙ্গে যে
মতামত তুলে ধরেছেন সেটাও তাঁর ব্যাক্তি্ক অভিমত। এক্ষেত্রে
লেখকের বিশ্লেষণের সাথে আমার উপলব্ধি একসূত্রে মিলে যায় বলেই আমি তাঁকে এই বিষয়ে
“বোধগম্যতার উচ্চমার্গে “ পৌঁছে যাওয়া লেখক মনে করি।অব্যক্ত বা না বলা কিছুই
কবিতা এবং শব্দের মাঝখানের “নিগুঢ়
নীরবতা“ যা abstract বা non-verbal que হয়ে পাঠক মনে প্রচণ্ড আবেদন তৈরি করতে পারে। ‘Sclience speaks when words fails‘- শব্দের পেছনের
এই নীরবতা শুধু কাব্য নয়, মহাকাব্যের
জন্ম দিতে পারে। একজন শক্তিশালী লেখক বা কবি হয়তো শব্দ প্রয়োগ না করেও শব্দের পেছনের নীরবতায় মর্ম স্পর্শ করে যাওয়ার
ক্ষমতা রাখেন, আর সেখানেই জন্ম হয় সাহিত্যের, কাব্যের।নীরবতারও একটা ভাষা আছে, যেমন আছে শিশিরের পতনের শব্দ। আর সেকারনেই রুমি
বলে গেছেন- listen to silence, it has so much to say! এক্ষেত্রে আকবর হোসেন হয়তো কবিতা আর শব্দের মাঝে সেই
নীরবতার বিষয়টা নিয়েই ভেবেছেন। তিনি শব্দাবলীকে ‘কাব্য’ বলতে নারাজ কিনা সে বিতর্ক এই পরিসরে সম্ভব নয়। তাছাড়া বইয়ের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি কিভাবে এসেছে
সেটাও ভেবে দেখা দরকার।আশা করি আগামীতে "বোধগম্যতার এক উচ্চ মার্গে পৌঁছেই আকবর হোসেন
কবি এবং কবিতাকে বিশ্লেষণ করেছেন" এরকম মত প্রকাশের আগে ঋতু মীর বিষয়টি নিয়ে আরও একটু ভাববেন"- কবি মেহরাব
রহমানের এই মন্তব্যের প্রতি পূর্ণ সন্মান রেখে দ্বিধাহীন ভাবেই বলতে চাই-যুক্তির
পরিপক্বতা, আবেগ আর উচ্ছাসের গভীরতায় এই ব্যাক্তি আমি লেখককে উচ্চমার্গের যে আসনে
বসিয়েছি সে সিন্ধান্ত আমার নিজস্ব চিন্তার ফসল।নতুন
করে বিকল্প ভাবনার বিষয়টি আসতে পারে লেখকের অন্য কোন বইয়ের নতুন কোন বিশ্লেষণে। এক্ষেত্রে সত্যি তার অবকাশ আছে কিনা – কবি
মেহরাব রহমান নিচ্ছয়ই তা ভেবে দেখবেন !
সুপ্রিয়
পাঠক! অনেক ধন্যবাদ!আজ কবির
ভাষাতেই বলি- ‘আমারে তুমি অশেষ করেছো...!ধন্যবাদ আলোকরেখা!!পনের লক্ষ পাঠকের কাছে ‘হে মহাজীবন‘ বইটিকে পরিচিত করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।সুস্থ সৃজনশীল সাহিত্য চর্চায় আলোকরেখা এগিয়ে চলুক একঝাঁক গুণমুগ্ধ
পাঠক সাথে নিয়ে- এই শুভকামনা নিরন্তর!
http://www.alokrekha.com
প্রসঙ্গ – “হে মহাজীবন“ ঋতু মীরের লেখায় এই কথা গুলো প্রযোজ্য পাঠকের অনুভূতি এবং উপলব্ধির প্রকাশ লেখকের এক বিশাল অনুপ্রেরনা।একটা মানসম্পন্ন ভাল লেখা বা কবিতার নান্দনিক প্রকাশে পাঠকের সুচিন্তিত মন্তব্য একজন লেখক বা কবির জন্য প্রাপ্য স্বীকৃতিও বটে! এটা অনেক লেখক কবিদের অপছন্দের কারণ ঋতু মীরকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ
ReplyDeleteপ্রসঙ্গ – “হে মহাজীবন“ ঋতু মীরের লেখাটা দারুন হয়েছে আমরা যারা পাঠক যারা আলোকরেখা পড়তে ভালো বাসি এবং মন্তব্য করি।
ReplyDeleteপ্রসঙ্গ – “হে মহাজীবন“ ঋতু মীরের লেখার সাথে একমত কবি মেহরাব রহমান যে আপত্তি জানিয়েছেন তা প্রযোজ্য নহে। কোন লেখার উপর পর্যালোচনা সম্পূর্ণই পাঠকের ব্যাক্তিক অভিমত এবং অনুভুতির গভীরতম প্রকাশ।যে কোন কিছুর পর্যালোচনা নির্ভর করে ব্যাক্তির নিজস্ব চিন্তা অর্থাৎ ব্যাক্তির নিজস্ব দেখার চোখ বা অনুভব দিয়েই তার বিশ্লেষণ করা হয়। সেখানে অন্য মতামতের ভিন্নতা থাকতেই পারে।
ReplyDeleteপ্রসঙ্গ – “হে মহাজীবন“ ঋতু মীরের লেখার সাথে সহমত পোষণ করছি এবং কবি মেহরাব রহমানেই মন্তব্যের সাথে দ্বিমত। কঠিন শব্দ চয়ন কিম্বা মাত্রার জাহিরিতে একটা অনন্য কবিতা হয় না ,কবিতা বা যে কোন লেখা সেটাই যা হৃদয় ছুঁয়ে যায়। মনের কথা বলে। অনেক ধন্যবাদ লেখককে আমাদের চোখ খুলে দেবার জন্য।
ReplyDeleteআমি কিন্তু কঠিন শব্দ ব্যবহারের কথা বলি নাই
Deleteকবিতার উপাদানের কথা বলেছি
যাই হোক আপনি কী ভাবে নিয়েছেন তা আপনার ব্যাপার
প্রসঙ্গ – “হে মহাজীবন“ ঋতু মীরের লেখায় একটা বিশেষ বিষয়ে উঠে এসেছে তা অবলীলায় অনবদ্য। "বাঙলা ভাষায় অনেক লেখক/কবি বানিজ্যিক প্রবণতা বা সস্তা জনপ্রিয়তার খাতিরে শব্দ বা ভাষার অপব্যাবহার করেন । যেমন, বই, নাটক বা বিজ্ঞাপন সংলাপে- দিও বা দিও না কে দিবা/দিবানা, কর বা করবেনা কে করবা / করবানা, যাবে, যাবে না কে যাবা/ যাবানা ইত্যাদির মত আরও অনেক বাঙলা শব্দ অবলীলায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এই সব শব্দের ব্যবহারে কোন লেখা বা সংলাপ যে কাব্য হতে পারেনা " .আমি মন থেকে এই ভাষা বিকৃতীকে নিন্দা জানাই ও লেখক ঋতু মীরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি। আলোকরেখাকে অভিনন্দন এমন দেখা প্রকাশ করার জন্য। যেখানে আমরাও অংশগ্রহণ করতে পারি।
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteসুপ্রিয় ঋতু মীর
ReplyDeleteআপনি কোথায় যেন বুঝতে ভুল করেছেন
আপনি বলেছেন :
কবি মেহরাব রহমানের মন্তব্যে- শব্দাবলীই কাব্য
আমার মন্তব্যে এরকম কথা বলেছি বটে তবে
তবে এর সাথে যুক্ত করেছি যা তা হলো :
"আর কাব্য গঠনে শৈলী ও উপাদানগুলো হচ্ছে শব্দের মাঝে নীরবতা, শূন্যস্থান , বহুমাত্রিকতার মতো রসদ
পুরে দেয়া
কবিতার মূল প্রাণ চিত্রকল্প
চিত্রকল্প গড়বার জন্য সব চেয়ে শক্তিশালী কাঁচামাল হলো শব্দ
শব্দ দিয়ে কবি উপমা উৎপ্রেক্ষা গড়ে তুলেন
এছাড়া কবিতা গঠনে আরো অনেক উপাদান এবং শৈলী
আছে
লেখক বলছেন "তাঁর মতে- শব্দাবলী কাব্য নয়, শব্দের মাঝখানে যে নীরবতা সেটা কাব্য" নীরবতা একটি প্রধান উপাদান হতে পারে
কেবল নীরবতাই কাব্য তা কী করে হয় ? এখানেই আমার আপত্তি
সুপ্রিয় ঋতু মীর
আমার মন্তব্যে আপনি এতটা কষ্ট পাবেন আমি বুঝতে পারিনি
আমি মূর্খ কবিতা বিষয়ে আমি যে দ্বিমত জানিয়েছি তা ভুল হতে পারে
আমি বলেছি আমার মত
আপনাকে খাটো করতে চাইনি
আমি কেবল বোঝাতে চেয়েছি কবিতার উপাদান শুধু এক মাত্রিক নয়
বহুমাত্রিক
শুধুমাত্র একটি উপাদানই কাব্য নয়
সব মিলিয়েই কাব্য
যাই হোক আপনার ভাবনাকে আমি খণ্ডিত করতে চাইনি
ভবিষতেও করবোনা
আমি কবিতায় কঠিন শব্দ ব্যাবহারের কোথাও বলিনি
I only requested you to pullup a second thought regarding definition of poetry
লেখক আকবর হোসেন এর লেখায় কবিতার সংজ্ঞাকে আমার কাছে খুব একপেশে মনে হয়েছে
যাই হোক আমি অবনত চিত্তে বলতে চাই আমি মূর্খ
ভুল কিছু বলে থাকলে দয়া করে ক্ষমা করবেন